ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচন নিয়ে আ. লীগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসছে না

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
নির্বাচন নিয়ে আ. লীগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসছে না

ঢাকা: আন্দোলন বা অন্য কোনো চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নেবে না আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটির বর্তমান অবস্থানের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপি দাবি করে আসলেও বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আর ফিরে যাওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বারই বলা হচ্ছে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই আগাচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এটি রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে। বিএনপিকে রাখার বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপিকে রাখার বিষয়টি নাকোচই হয়েছে। কারণ তিনি সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কথা বলেছেন। সংবিধানেও নির্বাচনের সময় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সরকারের দায়িত্বে থাকার কথাই বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এ উদারতা আমাদের আছে। এর আগেও আমরা নিয়েছি। এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমি আহ্বান করেছি, তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের কথা বললেও সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীসভার ১০ সদস্যে একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী করা যায়। সে হিসেবে বিএনপির প্রতিনিধি নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভায় রাখার সুযোগও রয়েছে। তবে বিএনপিকে রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আগ্রহ আছে কি না সেটিই সবচেয়ে বড় বিষয়। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বলেছেন সংসদে যাদের এমপি আছে তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বিএনপির তো কোনো এমপি নাই, তারা পদত্যাগ করে চলে গেছে। বিএনপি থাকবে কীভাবে?

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সংসদে যে দলগুলো আছে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচন করা যেতে পারে। সংসদের বাইরের কোনো দলকে নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সংবিধানেই বলা আছে।

টেকনোক্র্যাট হিসেবে থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী, ফ্যাসিস্ট, দেশবিরোধী চক্র। এ ফ্যাসিস্ট দেশবিরোধী চক্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক করার কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচন বা দেশের কোনো বিষয়ে বিদেশীদের তৎপরতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও আওয়ামী লীগ৷ এসব বিষয়ে বিদেশীদের অবস্থান প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে ৷ সম্প্রতি বিদেশ সফরের সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারসহ গত ১৫ মে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সরকারের কঠোর অবস্থান প্রকাশ করেছেন। দলের নেতারাও সভা সমাবেশে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছন ৷

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল সমঝোতার চেষ্টা চালায়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নির্বাচিত সরকারের প্রশ্নে অনড় থাকে এবং নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোর নিয়ে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারই দায়িত্ব পালন করে৷

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে এবং নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে দলটির নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন সে ব্যাপারেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে ও নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে এ ব্যাপারে কোনো শিথিলতা দেখানো হবে না বলে দলের নীতিনির্ধারক জানান।

এ বিষয়ে কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অবশ্যই চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে দেশে একটি ঐক্য তৈরি হবে, এটা আমরা চাই। তবে নির্বাচন সংবিদান অনুযায়ীই হবে, কেউ অংশ না নিলেও নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে। যথা সময়ে নির্বাচন করা সাংবিধানিক দায়িত্ব।  

এ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি আসবে কিনা এটা তাদের বিষয়। এজন্য নির্বাচন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না, ২০১৪ সালে তা প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচন সংবিধানের ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই হবে। সংববিধানের ধারাবাহিকতা আটকানোর চেষ্টা কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ শাস্তি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, এটা সংবিধানেই বলা আছে।

এদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে বিএনপি যে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা করছে যেগুলো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে ৷ তবে আন্দোলনের গতি পরবর্তী দিনগুলোতে এ অবস্থায় থাকবে না। এ আন্দোলনকে আরও জোরালো এবং পরিস্থিতি অচল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হতে পারে৷ বিএনপির নেতারও তাদের বক্তব্যে এটা বলে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সে বিষয়টি সরকার এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় রয়েছে৷ তবে পূর্বের অবস্থা তৈরি বা এ ধরণের চেষ্টা আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিহত করার প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। সব কিছু মাথায় রেখেই সরকার ও আওয়ামী লীগ সামনের দিকে আগাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো থেকে জানা যায়৷

ওই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগে থেকেই মাঠে রয়েছে। তারাও শক্ত অবস্থান নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করবে বলেও ওই সূত্রে জানা যায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ভাঙচুর করলে ওই হাত ভেঙে দেব। আগুন হাতে আসলে ওই হাত পুড়িয়ে দেব। নির্বাচন ভাল না লাগলে আপনি না আসতে পারেন ৷ কিন্তু নির্বাচন হতে দেবেন না, এতো বড় কথা বলার আস্ফালন করার শক্তি পেলেন কোথায়?

বাংলাদেশ সময় ১২১৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এসকে/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।