ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না আওয়ামী লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করোসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না আওয়ামী লীগ

ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, বিএনপির আন্দোলন বা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণাকেও কোনো সংকট মনে করছে না দলটি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দেশে এই মুহূর্তে এমন কোনো সংকট বা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপ করতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। সেখানে কোনো দল অংশ না নিলে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবি মেনে নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগও নেওয়া হবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে দলটি নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এ দাবিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে। তবে আওয়ামী লীগ সবসময়ই বলে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এবং সেই সময় নির্বাচিত সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। ঘোষণা অনুসারে আওয়ামী লীগও নিজেদের অবস্থানে অনড়।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এক সমাবেশে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সরকার রাজি। প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ হতে পারে। কিন্তু তার পরের দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজেদের সমস্যা নিয়ে প্রয়োজনে নিজেরা আলোচনা করবো। জাতিসংঘের মধ্যস্থতার প্রয়োজন আছে এমন সংকট হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি যেকোনো সমস্যার সমাধান আছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা পরিস্থিতি ও সময়ের ওপর নির্ভর করে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন সংলাপ হবে না, আমাদের সাধারণ সম্পাদকও একই কথা বলেছেন। এটাই আমাদের অবস্থান।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, এবং সেটা তার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কি নিয়ে আলোচনা হবে? দেশে তো এমন কোনো পরিস্থিতি নেই। এমন কোনো বিষয় নেই, এমন কিছুও ঘটেনি। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক আছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন হলে সেটা কমিশনের (ইসি) সঙ্গে হতে পারে।

বিএনপির নির্বাচনে না আসার ঘোষণা, তাদের আন্দোলনের পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের জন্য ভোটে তাদের আনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে খালিদ বলেন, যারা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয় দেয় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আলোচনা হতে পারে না। আর দেশে কোনো আন্দোলন নেই, কর্মসূচি থাকতে পারে। কর্মসূচি তো অনেক দলই দিচ্ছে, অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন দিচ্ছে। বিএনপি আন্দোলন বললেও তাদের সঙ্গে তো দেশের জনগণ নেই।  

সংলাপের বিষয়টি বাদ দিলে থাকে বিএনপির আন্দোলন। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, আন্দোলনে বিএনপি এখন পর্যন্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। যে দাবিতে দলটি আন্দোলন করছে সেটির প্রতি জনগণের সমর্থনও নেই। তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। আর আন্তর্জাতিক চাপের ব্যাপারেও সরকার এতটা দুর্বল বা চিন্তিত নয়। যেকোনো কূটনৈতিক তৎপরতা কূটনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেছেন, বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন কথা হবে। তবে আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাবে না। তাই সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে হ্যাঁ, তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি বাদ দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আসতে চাইলে সংলাপ হতে পারে। নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। সাংবিধানিক নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনে দুয়েকমাস আগে আলোচনা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।