বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) দুই নম্বর ওয়ার্ডে ২৯ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম মুরতজা আবেদীন পরাজিত হয়েছেন। জনপ্রিয় নয় এমন প্রার্থীর বিপক্ষে হেরে তিনি তার দীর্ঘ বছরের মসনদ হারালেন।
মুরতজার এমন পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না তার অনুসারীরা। কবির নামে মুরতজার এক সমর্থক বলেন, তিনি এমন প্রার্থীর বিপক্ষে হেরেছেন যিনি কিনা নিজের ছোট ভাইয়ের ডামি প্রার্থী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
মুরতজা আবেদীন ১৯৯৫ সালে তৎকালীন পৌরসভা নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৩ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে একই ওয়ার্ডে থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সে হিসেবে তিনি এ ওয়ার্ডে ২৯ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পঞ্চমবারের মতো জয়ের আশা নিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নেন মুরতজা। কিন্তু সোমবারের (১২ জুন) নির্বাচনে তিনি হেরে যান তরুণ প্রার্থী আরিফুর রহমান মুন্নার বিপক্ষে।
জানা গেছে, নব নির্বাচিত মুন্নার ছোট ভাই রইজ আহমেদ মান্না বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগে গত ১৫ মে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনিই কাউন্সিলর হতে চেয়েছিলেন। তাই তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন কিনে দাখিল করেন। এদিকে আবার সাদিকপন্থী হওয়ায় বিভিন্ন শঙ্কায় নিজের মনোনয়ন কেনার সময় বড়ভাই মুন্নার জন্যও একটি কিনে জমা দেন।
প্রার্থিতা বাছাইয়ে মান্নার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে আনেন। প্রতীক পান ঘুড়ি। মুন্নার প্রতীক নির্ধারিত হয় লাটিম। মান্না কারাগারে থাকায় বড় ভাই মুন্নাসহ পরিবারের সদস্যরা তার পক্ষে ওয়ার্ডজুড়ে প্রচারণা চালায়। তাছাড়া নিজের প্রচারণা থেকে খানিকটা বিরত থাকেন মুন্না।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে করা আপিলে মান্নার মনোনয়ন ফের বাতিল হয়। তারপর থেকেই ভাইয়ের ডামি প্রার্থী হিসেবে থাকা মুন্না নিজের প্রতীক (লাটিম) নিয়ে প্রচারণার মাঠে নামেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই-তিনদিন তিনি নিজের প্রচারণা চালান। আর তাতেই জয় পেয়ে মুরতজাকে মসনদ থেকে নামান।
হারের পর বিষয়টি নিয়ে একেএম মুরতজা আবেদীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বলবো ভোটে বিজয়ী হয়েছি। যারা ফলাফলে এগিয়ে তারা অন্য এলাকার মানুষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আগেই ভোটার বানিয়েছে। যার পুরোটাই তাদের পক্ষে কাস্ট হয়েছে। আবার যারা এলাকায় ভদ্রলোক মানুষ হিসেবে পরিচিত তারা দুপুর দুইটার পর সাধারণত কেন্দ্রে যায় ভোট দিতে। কিন্তু এ সময় বৃষ্টি হওয়ায় তারা ভোট দিতে যেতে পারেননি। তা ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি ভোট বর্জন করায় তাদের লোকজনও ভোট দিতে পারেনি। ব্যাডমিন্টন প্রতীক নিয়ে যিনি প্রার্থিতা করেছিলেন, তিনিও এবার আগের চেয়ে কয়েকগুণ ভোট কম পেয়েছেন। তারও ভোটও প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থীর পক্ষে গিয়েছে।
আমি ২৯ বছর এ ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর। এবার হারের পেছনে মুখ্য বিষয় ছিল অন্য এলাকার মানুষ নিয়ে এসে আমার ওয়ার্ডের ভোটার বানানো। এসব ভোটার বাতিল করতে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কমিশন নিজ সম্মান বাঁচাতে তা করেনি। যা হয়েছে, হয়ে গিয়েছে। আমি আমার সাধারণ মানুষের কল্যাণে সব সময় তাদের পাশে থাকবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭, জুন ১৩, ২০২৩
এমএস/এমজে