ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের সংবিধান-তত্ত্বাবধায়ক বোঝেন না। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান।
জি এম কাদের বলেন, সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝি না, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিতে চাই। যাতে নির্বাচনে সরকার কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। আমরা ফর্মুলা দিতে পারি, সব দল থেকে ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ইলেকশন নয় সিলেকশন হতে পারে। সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তছনছ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে। একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাচ্ছে। পেশাদার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোয় এখন আর নির্বাচন হয় না, সিলেকশন করে দেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস করে কর্তৃত্ববাদী এক নায়কতন্ত্র চালু করেছে। আগামী নির্বাচনেও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আর রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল থাকবে না। দেশ এক নেতার অধীনে চলে যাবে। এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করা হবে। দেশের মানুষ তাদের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষের অধিকার বলতে কিছুই থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার বলেছে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে; তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু সরকার ছাড়া সকল রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ বলছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিশ্ববাসী দেখেছে দলীয় সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সরকার বলছে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে, সাধারণ মানুষের ধারণা শতকরা ৫ ভাগ ভোটও সাধারণ মানুষ দেয়নি। ভোট যা পড়েছে তার প্রায় সবই তারা নিজেরাই দিয়েছে।
জি এম কাদের আরও বলেন, জনগণ এই ভোটের ওপর আস্থা রাখেনি, তাই তারা ভোটেও অংশ নেয়নি। নির্লজ্জভাবে এক প্রার্থীকে মেরে, এজেন্টদের বের করে দিয়ে নির্বাচনকে কলুষিত করেছে। সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কেমন হবে। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলার মুখ সরকারের নেই।
তিনি বলেন, রাস্তায় আন্দোলনে নামলে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার বিরোধীদের দমন করতে সব কিছুই করছে। মানুষকে মানুষ মনে করে না, বিরোধীদের ওপর পাখির মতো গুলি করা হয়। বর্তমান সরকারের দমন নীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই অর্থ ও জনবল না থাকলে মাঠে টিকে থাকা দূরূহ হয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টিকে সব চেয়ে বেশি দুর্বল করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। তারপর থেকে আওয়ামী লীগ সব সময় জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি সৃষ্টি করে রেখেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। জাতীয় পার্টির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে, জাতীয় পার্টি অনেকটা দুর্বল হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাই।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিজেদের একটি দেশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল। বীর শহীদরা জীবন দিয়ে একটি দেশ সৃষ্টি করেছে, যে দেশের মালিক হবে সাধারণ জনগণ। তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ পরিচালনা করবে। যদি প্রতিনিধিরা জনগণের ইচ্ছে মতো দেশ চালাতে ব্যর্থ হয় তাহলে ভোটের মাধ্যমে আবারও প্রতিনিধি পরিবর্তন করবে সাধারণ মানুষ। এই হচ্ছে দেশের মালিকানা। দেশের মালিকরা প্রতিনিধিদের সমালোচনা করবে, এটা অধিকার নয়, এটি জনগণের কর্তব্য। মানুষ যদি সরকারের ভয়ে কথা বলতে না পারে, সেই সরকার জনগণের সরকার নয়। আমরা জনগণের ভোটে জনগণের সরকার চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা চাই আমরা। জনগণের পাশে আমাদের থাকতে হবে। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকবো।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু। টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুস সালাম চাকলাদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, যোগদানকারীদের মধ্যে সৈয়দ শামসুদ্দোহা জুবায়ের, আব্দুল আজিজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
এসএমএকে/এমজে