ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক কিংবা দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নিজেদের ‘ফর্মুলায়’ নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। তারা মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সাংবাদিকদের কাছে ওই ফর্মুলার কথা জানান জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। এর আগে তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ২০২২ পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়।
এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা।
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জাতীয় পার্টির (জাপা) ‘ফর্মুলা’।
সরকারি ও বিরোধী দলগুলো নানা কর্মসূচি দিচ্ছে, জাপার কর্মসূচি বা সমাবেশের পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বিরোধী দলগুলো যেভাবে কর্মসূচি পালন করছে, আমরা হয়তো সেভাবে কর্মসূচি পালন করছি না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি মাঠে নাই, এমনটা নয়। রাজপথে বলতে যেভাবে বোঝায় সেভাবে হয়তো আপনাদের (গণমাধ্যমের) চোখে পড়ছে না। তবে আমরা আমাদের বক্তব্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে তুলে ধরছি।
সরকারি দল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে, আর বিরোধী দলগুলো চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, আপনারা কী চান- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না। যখন এটা হয়েছিল আমরা তখন থেকেই এর বিপক্ষে। কারণ হলে ৯১ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয় তখন বলা হয়েছিল সকল দলকে সমান সুযোগ দেওয়া হবে। সে সময় জাপাকে সমান সুযোগ দেওয়া হয় নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দল নিরপেক্ষ সরকার, পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ করেছে। আমাদের প্রার্থীদের বিনা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। তাই প্রথম থেকেই আমরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একটা নির্বাচনি ফর্মুলা আমরা দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি এই ফর্মুলায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে।
ফর্মুলাটা হলো যে আনুপাতিক হারে নির্বাচন। ৩০০ আসনেই দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে দল জাতীয় সংসদে সেই হারে আসন পাবে। এই ফর্মুলা আমরা দিয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন যে, সর্বদলীয়ভাবে একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যেন ফর্মুলাটা বলা হয়, সেভাবে নির্বাচনটা করার জন্য।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে নির্বাচনটা আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছি না। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকেও দূরে আছি।
আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এটাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। কারণ নির্বাহী বিভাগে যারা নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকেন তারা পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ করেন। তাদের কী শাস্তি, সেটা উল্লেখ নেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ কিছুদিন আগে সংশোধন হলো। এতে নির্বাচন যদি পোলিং, প্রিজাইডিং অফিসার অনিয়ম করে দুই থেকে দশ বছরের সাজা হবে। কিন্তু নির্বাহী বিভাগের যারা দায়িত্বে থাকবেন বা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকেন তারা যদি অনিয়ম করেন, কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেন, তাদের কী হবে?
তিনি আরো বলেন, আমরা গত নির্বাচনগুলোতে দেখেছি যে নির্বাহী বিভাগ একটা পক্ষের হয়ে কাজ করেছে। এই শাস্তির বিধানটা যদি তাদের ক্ষেত্রেও থাকতো, তাহলে ইসির পক্ষে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হতো।
জাপা মনে করে যে এজন্য একটা সংলাপ হওয়া দরকার। সেই সংলাপে সর্বদলীয়ভাবে যদি আমরা একটা ঐক্যমতে আসতে পারি, তাহলে আমরা একটা যে কোনো প্রক্রিয়ায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো। কারণ সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। ৯১ সালের নির্বাচনটা কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী হয় নাই। সংবিধানের বাইরে হয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব বলেন, ২০০৭ সালেও কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক এসে দুই বছর ছিল। দুই বছর থাকার কোনো পথ ছিল না। তবে জনগণ যেহেতু মেনে নিয়েছে, সেই হিসেবে এটা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কাজেই সংবিধানের বাইরে একেবারে যাওয়া যাবে না, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু করা যাবে না, এটার সঙ্গে লজিক্যালি একমত না আমরা।
ইসিতে জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জাপার আয়ব্যয় দুটিই বাড়লেও আগের বছরের চেয়ে তহবিল ছোট হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
ইইউডি/এসআইএস