ঢাকা: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনন জোরদার করতে রাজধানী সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেল ৪টায় গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে মৎস্য ভবনের সামনে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
সাকি বলেন, আজ ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। কেন ঐতিহাসিক মুহূর্ত, এক দফা কি গভীরভাবে চিন্তা করেন এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রে প্রাথমিক ভিত্তি। এটি হচ্ছে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে গুন্ডা তৈরি করে বিএনপির পিছু পিছু হাঁটছে, পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে তারা হামলা করতে চায়, তাদের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। প্রতিরোধ করা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। আমরা আগামীকাল সকাল ১১-৪টা পর্যন্ত রাজধানীর সব প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করবো, হামলা বা বাধা দিলে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এক দফা মানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, এজন্য জনগণের সংসদ লাগবে, সেই সংসদ গঠন করতে চাইলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এটি করা সম্ভব না, ২০১৪ এবং ১৮ তার প্রমাণ দিয়েছে। দিনে দুপুরে ভোট ডাকাতির জন্য তারা আরপিও সংশোধন করলো। ঢাকার সব প্রবেশ পথে ব্যারিকেড দিয়েছে, এর জবাব জনগণ দেবে, এই সরকার রেখে কোনো কিছুই সম্ভব নয় তাই আমাদের এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
সাকি বলেন, আমাদের আন্দোলন বিরোধী দলের বাংলাদেশ রক্ষার আন্দোলন, কাজেই এ সরকারকে একদিন ক্ষমতায় রাখলে বিপদের মুখে পড়বেন। যারা নানা সুবিধা নিয়ে হাত বন্ধ করে রেখেছেন তারা ঘুম থেকে জেগে উঠেন, না হলে মানুষ আপনাদেরকে ছুড়ে ফেলে দিবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, গায়েবি মামলা বন্ধ করেন, দেশকে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছেন, দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত কিন্তু রক্ত দিয়ে হলেও আপনাদেরকে চলে যেতে হবে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজন যারা এতদিন অন্যায়কে সমর্থন করেছেন দয়া করে হাত গুটিয়ে নেন, আর অন্যায় করেন না। আপনারা দুর্নীতিবাজ, লুটবাজকারি ও ব্যাংক লুটেরাদের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা শান্তি সমাবেশ অন্যদিন করেন না কেন? আপনারা হামলা করতে চাইছেন হামলা করলে জনগণ ছেড়ে দেবে না। চরম সন্ত্রাসের দিকে দেশকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে, আমরাও ছেড়ে দেব না, রক্ত আরও দিব তবুও স্বৈরাচারের পতন ঘটাবো।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট চোর নয় আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাত। জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে, অত্যাচারী এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অনেক কিছু বাতিল হবে অপেক্ষা করেন, দিন পাল্টেছে এবার একটি ঘোড়ার গাড়িও বন্ধ করতে পারেনি, শেখ হাসিনার দিন খারাপ হচ্ছে, লাখো মানুষ জমায়েত হয়েছে কিছু করতে পারেনি, বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে তারা যদি না বুঝে তাহলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। যতদিন সরকার পতন না হচ্ছে আমরা রাস্তায় থাকবো। আগে মানুষ বলতো কবে যাবে এখন বলে কতদূর, পতনের ঘণ্টা বাজিয়েই ঘরে যাবো।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার বলেন, ৯০ শতাংশ মানুষ কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, এ রকম আন্দোলন ৬৯ এ হয়েছিল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আবার হবে। সময় এখন এসে গেছে জনগণ জেগেছে সরকারের পতন নিশ্চিত।
তিনি বলেন, ১৪ সাল আর এই সাল এক সাল না, তাদের ক্ষমতায় রেখে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা ভোটবিহীন সংসদের বাতিল চাই এবং বিএনপির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমাদের এক দফা মানে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের এক দফা। আওয়ামী যত তাড়াতাড়ি যাবে ততই তাদের মঙ্গল, যত দ্রুত যাবেন ততই শেখ হাসিনা ও আপনার দলের জন্য ভালো।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা ৩১ দফার ভিত্তিতে ৩৭ দল এক দফার দবিতে একত্র হয়েছি। আমরা ওয়াদা করছি হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার গঠন করবো। যতদিন পর্যন্ত পতন না হবে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আজকের বৃষ্টি অনেক এটিকে রহমতের বৃষ্টি বলে অবহিত করেছে, প্রকৃতি আজকে তার ছায়া নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে কত মানুষ গোনা যাচ্ছে না, আজকে ঢাকাকে জনগণ প্রতিবাদের নগরি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সব বিদ্রোহ মানুষ যখন রুখে দাঁড়ায় তখন মানুষ একটি অলৌকিক দ্রুতি ছড়ায়। আজ বাংলাদেশ নতুন পথচলায় দাঁড়িয়ে তাই আমরা এ সুযোগ মিস করতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে স্বাধীনতা কথা বলে ৫২ বছর পরও মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই এ সরকারকে জনগণ চায় না। গত ১৫ বছরে দেশকে সম্ভাবনাহীন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। দেশটিকে তারা জাহানাম বানিয়ে দিয়েছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ যেমন শরীর নষ্ট করে ঠিক তেমনি মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকার দেশকে নষ্ট করে। তাই এ সরকারকেও বিদায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে, এরা যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের বিদায় নিতে হবে। আমরা এখন বিজয়ের কাছাকাছি যে কর্মসূচি আসবে আমরা সামনে থেকে সাহস নিয়ে লড়ব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৩
এসএমএকে/জেএইচ