ঢাকা: এনাফ ইজ এনাফ। ভাঁওতাবাজি করে দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, গুলি চালিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। দেশের সমস্ত মানুষ একসঙ্গে জেগে উঠেছে। দাবি একটাই- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান ফখরুল। তা না হলে আওয়ামীয় লীগ পালানোর পথ খুঁজে পাবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা সব দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। দাবি এক দফা। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও। না হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। অবিলম্বে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে ফয়সালা হবে রাজপথে। তাই হামলা, মামলা গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধ করুন।
বিএনপির এ শীর্ষ নেতা আরও বলেন, অবৈধ সরকারের পুলিশ আমাদের ২৭ জুলাই সমাবেশ করতে দেবে না। আমরা তো পরেরদিন করলাম। সেখানে প্রতিকূল পরিবেশেও টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের বার্তা ছিল এই মুহূর্তে গদি ছাড়ো। আমাদের ছোট ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও সরকার ভয় পেয়েছে। তারা যুদ্ধের সাজে সাজোয়া যান নিয়ে নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা করেছে। প্রবীণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক থাকে না তারাই এগুলো করে। এই নাটকে তারাই ছোট হয়েছে। গয়েশ্বর-আমান ছোট হননি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এগুলো করে কি মানুষের ঢল থামানো গেছে? থামানো যায় নি যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ।
কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে? তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না। আমরাও নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
জনসমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানের উদাহরণ দিয়ে ফখরুল বলেন, তিনি অফ স্পিন বল করেন। আরেকটা স্পিন আছে গুগলি। গুগলি বোঝেন? ব্যাটসম্যান কিছু বোঝার আগে স্ট্যাম্প নাই। বোল্ড আউট। এই ২৮ আর ২৯ তারিখে বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ পুরো বোল্ড আউট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বুঝবে না কোন দিক দিয়ে বলটি আসবে।
পরিষ্কার কথা- বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার আর সেটা হবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে আর আগের মতো নির্বাচন করা যাবে না। কারা কর্তৃপক্ষ যদি জেলকোডের বাইরে কিছু করেন সবকিছুর হিসাব দেশের মানুষ বুঝে নেবে।
সরকার প্রধান ভয় পাচ্ছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।
বক্তব্যের শেষ দিকে শিগগিরই একদফার পরবর্তী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশ পথে বিএনপি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যৌথ আক্রমণ-হামলা, নির্যাতন ও পাইকারি হারে দিলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জনসমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন প্রমুখ।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
টিএ/এমজে