ঢাকা: গত শনিবার (২৯ জুলাই) বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ ও সরকারি দল একযোগে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে। আন্দোলন দমনের অজুহাত বের করতেই পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩১ জুলাই) সকালে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। তাদের ভাষ্য, ২৯ জুলাই বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি ছত্রছায়ায় বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসী কায়দায় উপর্যপুরি হামলা আক্রমণ চালায়। পুলিশ এদের কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি, বরং বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিরোধী দলসমূহের শতাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীর তাণ্ডবে আহত হয় কয়েকশ নেতাকর্মী। পুলিশ এখন উল্টো বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে শত শত নেতা কর্মীকে জেলে পাঠাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে এসব খবরাদি বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে। এখন বিএনপিসহ বিরোধীদের দমন করার অজুহাত হিসাবে বাসে আগুন দেওয়ার এসব ঘটনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারের এইসব অপকৌশল এবার ধরে ফেলেছে। হামলা, আক্রমণ, গ্রেপ্তার, নিপীড়ন রাষ্ট্রীয় ও সরকার দলীয়দের পরিকল্পিত নাশকতা দিয়ে সরকার গদি রক্ষা করতে পারবে না। এই সরকারকে বিদায় দিতে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। চলমান চলমান গণসংগ্রামকে গণঅভ্যুত্থানের পথে নিয়ে যেতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
পুরানা পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন গণতন্ত্র মঞ্চের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল। সমাবেশ পরিচালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ঈমন।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুল হক প্রমুখ।
সমাবেশ সাইফুল হক বলেন, সরকারি দলের বিক্ষোভ গণ তামাশার জন্ম দিয়েছে। মনে হয় দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই তারা বিক্ষোভ করছে। সরকার ও সরকারি দল পুরোপুরি দেউলিয়া বলেই তাদেরকে বিরোধীদলের লেজুড়বৃত্তি করতে হচ্ছে। বিরোধী দলের পিছনে পিছনে হাটতে হচ্ছে। সরকার ও সরকারি দল যেভাবে আগুন নিয়ে খেলছে, এই আগুনেই হয়তো তাদেরকে পুড়ে মরতে হবে।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, কোনো উস্কানি ছাড়াই আমাকে ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলাকারী সরকারি দলের কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যত বাধা আর হামলা আক্রমণ আসুক না কেন দেশের মানুষ এবার এই সরকারকে বিদায় দিয়েই ঘরে ফিরবে।
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এই সরকার এখন পুলিশ নির্ভর হয়ে দমন নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরা মুখে গণতন্ত্র আর সংবিধানের কথা বললেও বাস্তবে তারা মানুষের ভোটের অধিকারসহ সব গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে এই সরকারকে বিদায় দিতেই আমরা ১ দফা ও ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছি। তিনি মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিভাগীয় শহরসহ জেলাস্তরে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করারও আহ্বান জানান।
শহীদুল্লাহ্ কায়সার বলেন, অতীতের স্বৈরশাসকরা যেভাবে বিদায় নিয়েছে বর্তমান স্বৈরশাসকদেরকেও জনগণ সেভাবে বিদায় দেবে। তিনি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে সতর্ক করে গণবিরোধী সরকারের সহযোগী না হতে আহ্বান জানান।
শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বিরোধী দলসমূহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকার দলীয়দের হামলা আক্রমণ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসেরই নমুনা। নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আতংক থেকেই তারা দমন নিপীড়ন ও সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছে। এসব মোকাবিলা করেই দেশের মানুষ এবার নিজের অধিকার ও মুক্তি অর্জন করবে।
আবুল হাসান রুবেল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার হরণকারী এই সরকার গণ আন্দোলনকে ভয় পেতে শুরু করেছে। নিজেদের ভয় তারা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই তারা বেসামাল হয়ে উঠছে। দেশের মানুষ এবার পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমেছে এবার তারা তা বাস্তবায়িত করবে।
নেতৃবৃন্দ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ড. আবু ইউসুফ সেলিমের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং অনতিবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ করে বিজয়নগরে শ্রমভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
এমকে/এমজে