ঢাকা: দেশের মানুষ জেগে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এই দেশে গণতন্ত্র নেই।
শনিবার (৫ আগস্ট) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি সাজার প্রতিবাদে এবং ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আয়োজিত পেশাজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার দেশের মানুষ জেগে উঠেছে৷ তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এই দেশে গণতন্ত্র নেই৷ তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, গত দুটি নির্বাচন চুরি, ডাকাতি হয়েছে, ভোট নিয়ে গেছে। এবার অবশ্যই জনগণের ভোটের নির্বাচন হতে হবে। এবার জনগণকে ভোট দিতে হবে। কিন্তু এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেটি হবে না। এখন থেকেই তারা (সরকার) নির্যাতন, গুলি করতে শুরু করেছে। এখন থেকেই রাতে বাড়িতে থাকতে দেয় না। কিন্তু এভাবে আটকানো যাবে না। বন্যার পানি যেমন আসতে থাকে, তেমনি মানুষ আসছে। এই দুর্বার মানুষের আন্দোলন তরঙ্গের পর তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদের (সরকার) চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
তারেক-জোবাইদার সাজার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ঠিক এই সময়ে এই রায়টি কেন? দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত তাদের অধিকারের কথা বলতে শুরু করেছে, নদী, পাহাড়, পর্বত ডিঙিয়ে দাবি জানানোর জন্য আসছে, এই ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্রের শত্রু, অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মানুষ জেগে উঠেছে, সেই সময় এই রায় দিয়ে সরকার জনগণের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
তারা (সরকার) বাংলাদেশর পক্ষে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে, ভোটের অধিকার পক্ষে কথা বলে সেই দলের নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিতে চায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পক্ষে যারা থাকবে তাদেরকে তারা (সরকার) নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। তারই ধারাবাহিকতায় এদেশের নেত্রীকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা-সাজা দিয়ে এই দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষকে কোনো সাজা দিয়ে, মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে জখম করে, নিহত করে, গুম করে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করা যাবে না। এটা আমাদের অন্তর্গত শক্তি।
ফখরুল বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি এটি স্বাধীন দেশের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমরা পরবর্তীতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। আজকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই করছি। একটিই লক্ষ্য আমাদের, আমরা এই জনগণের জন্য স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। এখানেই তাদের (সরকার) আপত্তি। কারণ, তারা দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যদি করতো তাহলে তারা দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করতো।
তারা (সরকার) দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে পর পর দুটি হাস্যকর নির্বাচন করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আবারও এমন নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, ডিসি, এসপির পরিবর্তন, পোস্টিং, প্রশাসনের হাজার হাজার মানুষের পদোন্নতি। যার অর্থ, আগের মতো প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। আমরা এখন যে যুদ্ধে নেমেছি, যে সংগ্রামে নেমেছি, এটা বিএনপি, তারেক রহমান বা মির্জা ফখরুলের নয়, এই যুদ্ধ দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষা করার।
বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই পেশাজীবী সমাবেশে আর উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়রপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
এসসি/এমজে