ঢাকা: বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বাম গণতান্ত্রিক জোট। এসব দাবি না মানলে হরতাল, ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচির জন্য দেশবাসীর প্রতি প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বৃহত্তম এ বাম ধারার রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ নেতারা।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন উচ্ছেদ-ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ হন’ শিরোনামে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন এ জোটের নেতারা।
সমাবেশ শেষে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
তিনি বলেন, এ সমাবেশ অনতিবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া,নির্বাচন কমিশন বাতিল, নির্দলীয় তদারক সরকারের অধীনে নির্বাচন ঘোষণা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। এসব দাবিতে সব শ্রেণি পেশার মানুষ, বিরোধী রাজনৈতিক দল, প্রগতিশীল ও মুক্তমনা,গণতন্ত্রমনা মানুষদের গণআন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এ সরকার জনমত উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে এক তরফা নির্বাচনের ঘোষণা দিলে, সর্বোচ্চ বিক্ষোভ সংগঠিত করার প্রস্তুতি নেওয়া, ঘেরাও,অবস্থান, অবরোধ, হরতালের প্রস্তুতি রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
এ সব দাবি নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। একই দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। এদিন ঢাকায় বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে এবং জেলা, উপজেলা পর্যায়ের প্রেসক্লাব বা সুবিধা মতো স্থানে অবস্থান নেবেন বলে বক্তব্যে জানান মাসুদ রানা।
বামেরা এবার কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ৷
তিনি বলেন, অনেক রাজনীতি হয়েছে, অনেক আন্দোলন হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এক সরকার পরিবর্তন হয়ে আরেক সরকার এসেছে কিন্তু জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন হচ্ছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাচ্ছে, আন্দোলন হচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় যাচ্ছে। জনগণের পক্ষের কেউ ক্ষমতায় যাচ্ছে না। এ কারণে দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে চাই গণতান্ত্রিক জোট এবার আর কোনো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না।
বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। বর্তমানে যে অগণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে,এটি থাকলে দেশ আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে৷ এ অন্ধকার থেকে বাঁচার জন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রহিন হোসেন প্রিন্স।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন ভোট নিয়ে না কী আমরা কথা বলি। কেন কথা বলবো না? ভোটের নামে কী করেছেন? যদি লজ্জা থাকতো, এ কথা আপনি বলতে পারতেন না। আপনি কীভাবে ভাবলেন ভোট নিয়ে আমরা কথা বলবো না? যতদিন আমাদের অধিকার আদায় হবে না, ততদিন আমাদের কণ্ঠ সোচ্চার থাকবে।
সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিশেষ সুবিধা দিয়ে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট এবং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা লোকেদের মাধ্যমে একটি পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলের লড়াই ছিল ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের জন্য। আজকে লড়াই করতে হচ্ছে আবার গণতন্ত্রের জন্য, বৈষম্য আকাশচুম্বী! একই তথ্য পাই আরেক ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে। তাদের সম্পদ কত জানেন? ১০ হাজার কোটি টাকা!
বিকেল চারটায় শুরু হওয়া এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
এ সময় তারা ভাত ও ভোটের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে দেওয়া স্লোগানে তারা নির্দলীয় তদারক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন।
এছাড়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদসহ সমমনা অন্যান্য বামধারার রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ