ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে: জি এম কাদের  

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে: জি এম কাদের  

ঢাকা: গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।  

তিনি বলেছেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে কোনো সংবাদকেই সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করতে পারবে।

গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করতে পারবে সাইবার সিকিউরিটি আইনে। এখন গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে, আগামীতে কোনো সেন্সর দরকার হবে না। কারণ, গণমাধ্যম কোনো সংবাদই করতে পারবে না। এতে সকল নিউজ চ্যানেল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পেশাজীবী সমাজের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  

জি এম কাদের বলেন, নিউজের পরিবর্তে এখন টেলিভিশনে গান-বাজনা ও নাটক চলবে, কেউই আর সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের অভাব। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশ নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে জনগণই দেশের মালিক। জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করে। মালিক হিসেবেই জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারেন, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী? জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা না করতে পারে সেখানে আর গণতন্ত্র থাকতে পারে না।  

তিনি আরও বলেন, সরকারের সমালোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা কখনোই এক নয়। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়, সরকার বিরোধী আন্দোলনে বাধা দেয়া হয় তখন আর গণতন্ত্র থাকে না।  

দ্বাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। দুটি পক্ষ যেভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে সহিংসতার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। একটি দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা জিততে না পারলে যেন তাদের মৃত্যু হবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। আবার ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের দুর্গতি হবে এই ভেবে সরকারি দল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুটি দল মুখোমুখি হলেই বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে। দেশ ও জাতি ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জেদ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে ধ্বংস করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের পক্ষে কথা বলছে। তারা সরকারি দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সরকারকে ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতাকর্মী এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সামনে কঠিন সংগ্রাম অপেক্ষা করছে, আমাদের সেই সংগ্রামে জিততে হবে। আমরা কারো পক্ষ বা বিপক্ষ নয়, আমরা জনগণের পক্ষের শক্তি।  

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে।  

এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষের পেটে খাবার নেই, তারা উন্নয়ন দেখে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠবে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে দেখতে চায়।  

অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিকুর রহমান আকাশ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের বক্তব্য রাখেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
এসএমএকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।