ঢাকা: রাজধানীসহ সারা দেশে রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
অন্যদিকে হরতালের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশজুড়ে শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বাংলানিউজের স্টাফ, ডিস্ট্রিক্ট ও উপজেলা করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবরে জানুন রোববারের হরতাল আর শান্তি সমাবেশের চিত্র:
মানিকগঞ্জ: বিএনপির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অংশে চারটি মোটরসাইকেল, একটি সিএনজি ও স্বপ্ন পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
আজ ভোরে জেলার সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল সদর উপজেলার মানড়া এলাকার রাতের কোনো এক সময় অগ্নিসংযোগ করা হয়। অপরদিকে সকাল পৌনে ৯টার সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা নামক স্থানে স্বপ্ন পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। দুপুর ১টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার নালী ইউনিয়নের উভাজানি এলাকায় সিএনজিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সিপিসি-৩ র্যাব-৪ অঞ্চলের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, ভোর বেলায় সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার মানড়া এলাকায় রাতের কোনো এক সময় আরও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
লক্ষ্মীপুর: বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক পুলিশ হত্যা, নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস এবং হরতালের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরে মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা যুবলীগ। শহরের এলজিইডি ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক পদক্ষিণ করে। পরে ঝুমুর চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করে তারা। জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বায়েজিদ ভুঁইয়ার আয়োজনে যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।
শরীয়তপুর: দেশব্যাপী বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এমপির নির্দেশে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সখিপুরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। এদিন নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ, নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন, সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মানিক সরকার।
এতে স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপি দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তারা আবারও রাজনীতির নামে মানুষ হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন। তারা আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই দেশে অরাজকতা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে তারা নষ্ট করতে চায়। তাই বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য সবাইকে প্রস্তত থাকতে হবে।
পঞ্চগড়: সারাদেশে নাশকতা সৃষ্টি ও বিভিন্ন মামলায় পঞ্চগড়ে বিএনপি-জামায়াতের তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী ও দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় নাশকতা সৃষ্টিসহ পূর্বের দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় বিএনপি-জামায়াতের এই তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কারণে পঞ্চগড়ে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। এতে করে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছে। তবে হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। এখনো পর্যন্ত ঘটেনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের কারণে শহরের সড়কগুলোতে স্বাভাবিক দিনের মতোই ছোট যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে যাত্রীদের। তবে জরুরি প্রয়োজনে থ্রি-হুইলার ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে ছুটে যেতে দেখা গেছে মানুষজনকে।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বাংলানিউজকে জানান, হরতাল ডাকের পর থেকে জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে রাত থেকে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েম করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। তবে আশা করছি, শান্তিপ্রিয় এই জেলায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।
চাঁদপুর: বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ডাকা সকাল সন্ধ্যার হরতাল শেষ হয়েছে। জেলার বিভিন্নস্থানে নাশকতার চেষ্টার সময় ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ায় সদরের আশিকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আলমগীরসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
ঠাকুরগাঁও: বিএনপির মহাসচিবকে আটকের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিএনপির ঠাকুরগাঁও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে শহরের চৌরাস্তার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মিছিলটি বাধা দেয়। এক পর্যায়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিআরসেল নিক্ষেপ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পরে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে অবস্থান নেয়। মিছিলকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রাঙামাটি: দলীয় সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে আসার সময় বিএনপির নয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সকালে জেলা সদরের সাফছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের ডাকে দিনব্যাপী ডাকা হরতালের কোনো প্রভাব নেই রাঙামাটিতে।
শহরের জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো অবস্থান নেই। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কার্যালয়টির সামনে পুলিশ এবং আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
তবে বিএনপির অবস্থান না থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছে এবং হরতালবিরোধী মিছিল করছে।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল আমিন বলেন, পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী পুরো শহর নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রেখেছে। যেখানে অরাজকতা এবং নাশকতা হবে সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।
নওগাঁ: বিএনপি-জমায়াতের ডাকা হরতালে নওগাঁয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। হরতালে জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করছে।
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো রাস্তায় ইজিবাইক, অটোরিকশা, টেম্পু ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করছে। স্কুল, কলেজ ও অফিসমুখী লোকজনও রাস্তায় ছিলেন। শহরের কেডির মোড় এলাকায় বিএনপি দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের রাস্তায় দেখা যায়নি। হয়নি কোথাও মিছিল-সমাবেশ। তবে আন্তঃজেলা বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো প্রকারের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সব সময় প্রস্তুত আছে।
ময়মনসিংহ: বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ। এসময় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। নগরীর টাউন হল অডিটরিয়াম সংলগ্ন ভাষা সৈনিক শামসুল হক মঞ্চে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
প্রতিবাদী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মমতাজ উদ্দিন মন্তা, অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম. এ কুদ্দুস, একে.এম সাজ্জাদ হোসেন শাহীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ আলী আকন্দ।
এতে জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মাগুরা: মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে দুপুর ২টার দিকে এসবি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন হরতালকারীরা।
এ সময় তারা একাধিক অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এসব হামলার সময় বাস ও অটোরিকশা থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে আহত হন কয়েকজন যাত্রী।
ঘটনার সময় হামলাকারীরা সেখানে বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বলেও দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে বাসের আগুন নেভায়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে এসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তার আগে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা সংখ্যায় ২০ থেকে ৩০ জন ছিলেন।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ঢাকার রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যশোর থেকে ফরিদপুরগামী একটি বাসেও হামলা চালায় বিএনপি। তবে সেখানে কেউ আহত হননি। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নড়াইল: বিএনপি-জামায়েতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নড়াইলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও প্রভাব পড়েছে পরিবহনে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা গেলেও বিএনপি-জামায়েতের কোনো নেতা কর্মীরা মাঠে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে নড়াইলের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করলেও নড়াইল- যশোর, খুলনা সড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা। যারা বিপদে পড়ে যাচ্ছেন তাদের ভরসা ইজিবাইক। সেখানে কয়েকগুণ ভাড়া দিয়ে তারা যাচ্ছেন। দূরের যাত্রীরা অনিশ্চিতভাবে রওনা হয়েছেন।
নড়াইল পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যশোর যাওয়ার জন্য যাত্রীদের ভিড়। ইজিবাইকে করে যাচ্ছেন সবাই। কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হরতাল ও নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজপথে নেমেছি।
জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা ও ভাঙ্গা থেকে তাদের দুইজন নেতাকে পুলিশ আটক করেছে। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ এ আনসার সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় সারাদেশের মতো বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের প্রভাব পড়েছে শুধুমাত্র বাস-ট্রাকের ওপরে। তবে দোকানপাট সকাল থেকে সচল। বাস-ট্রাক না চললেও বিকল্প যানবাহন চলছে। দূরপাল্লার বাস ও জেলার মধ্যে বাস না চলায় একটু ভোগান্তিতে যাত্রীরা।
এদিকে হরতালে বিএনপি-জামায়াত কিংবা হরতাল সমর্থনে কোথাও কাউকে দেখা যায়নি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন জানান, আমরা ঢাকার কর্মসূচি শেষ করে আসছি।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থানে রয়েছেন।
কক্সবাজার: কক্সবাজারে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। তবে শহরের ভেতরে হরতালের প্রভাব খুব একটা চোখে পড়ছেনা। দূরপাল্লার বাসছাড়া অন্য সব যানবাহন প্রতিদিনের মত চলাচল করছে।
হরতালকে ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে ভোর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি শহরজুড়ে বিজিবি ও র্যাবের একাধিক টিম টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সকালে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে পুলিশ আসার আগেই নেতাকর্মীরা সটকে পড়ে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ। সড়কে বিশৃঙ্খলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: হরতালকে সামনে রেখে শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৫ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় আটটি ককটেল ও ১০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়।
এদিকে হরতালের কারণে জেলা শহরের প্রধান প্রধান মার্কেটসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো বাস, ট্রাক বা অন্যান্য বড় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। ভটভটি, নসিমন, করিমন, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করেছে যথারীতি। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিয়েছে রাস্তায় রাস্তায়।
পাবনা: বিএনপি ডাকা হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি পাবনায়। পিকেটিং বা মিছিল, মিটিং করতে দেখা যায়নি দলটির নেতাকর্মীদের।
এদিকে দুপুরে পাবনায় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলটি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এসময় সেখানেই একটি উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন নেতাকর্মীরা।
বগুড়া: সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথায় টেম্পল রোডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের টেম্পল রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সমবেত হন। একই সময় ওই সড়কের উত্তর প্রান্তে থাকা শহর বিএনপির কার্যালয়েও নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। এতে উত্তেজনার একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় শহর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপরে ককটেল হামলা চালানো হলে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এসময় শহর বিএনপি কার্যালয়েও হামলা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে রাবার বুলেট ছুড়ে উভয়পক্ষকে হটিয়ে দেয়।
হরতালে শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি আটকে দিয়েছেন পিকেটাররা। এর আগে সকালে ছাত্রদলের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
সকাল ৮টার দিকে হরতালের সমর্থনে শহরের নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশ বাধা দিলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নাটোর: নাটোরে নাশকতার চেষ্টাসহ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগে এক জামায়াত নেতাসহ বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। হরতাল ছিল নিরুত্তাপ।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার পাঁচ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে বোমা সদৃশ বস্তু, বাঁশের লাঠি, লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নয়জন, আলমডাঙ্গা থানায় ১২ জন, দামুড়হুদা মডেল থানায় তিনজন, দর্শনা থানায় পাঁচজন ও জীবননগর থানায় নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গায় হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি।
বাগেরহাট: বিএনপি-জামায়াতের ঢাকা হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বাগেরহাটে। সকাল থেকে হরতাল বাস্তবায়নে বাগেরহাটে বিএনপি-জামায়াতের তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। ফলে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে বাগেরহাট থেকে সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। ভোর ৬টার দিকে বাগেরহাট শহরের দশানী ট্রাফিক মোড়ে পথসভা করেন তারা। এতে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বসিরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েশী আশরাফী জেমসসহ অনেকে।
সাতক্ষীরা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালেও সাতক্ষীরার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিং চোখে পড়েনি। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের পিএন স্কুল মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সঙ্গীতা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম গ্রেপ্তার হন। ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন তার বাবা মো. লুৎফর রহমান। শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বরগুনা: রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া বরগুনা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো জেলায় ফেরেননি। তাই রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বরগুনায় মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে জেলা বিএনপির অফিসও রয়েছে তালাবদ্ধ।
সকাল থেকেই হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। শহরের সড়কগুলোতে সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে ভারী যানবাহন অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান রয়েছে।
জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বরগুনা পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। সড়কে দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে। তবে ছাত্রদল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে।
অন্যদিকে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এছাড়া পৌর সুপার মার্কেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়েছে। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীরসহ সাবেক সিনিয়র নেতাকর্মীদের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার রাজধানীর সমাবেশের জন্য আমরা ঢাকায় এসেছি, এখনো বরগুনায় ফিরিনি। বরগুনায় কোনো নেতাকর্মী না থাকায় হরতালের মাঠে থাকতে পারিনি।
ঝালকাঠি: সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ঝালকাঠিতে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি।
খবর পেয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সদস্য সচিবের বাসায় হামলা করেন। ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় জেলা বিএনপি সদস্য সচিবের বাসা থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের হোসেন, বিএনপি পন্থী আইনজীবী তুষার, প্রচার সেল কর্মী আরিফকে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে চার উপজেলার আরও ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
হরতালে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস এবং অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ভোর থেকে মহাসড়কে বরিশাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৮ এর একাধিক টিম টহল দিয়েছে। জেলা শহরসহ অন্যান্য শহর ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
তবে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করীম জাকির ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, হরতালের নামে নাশকতা এড়াতে হরতাল বিরোধী মহড়া দিয়েছি। বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে অপর পক্ষ হামলা ভাঙচুর করতে পারে। ভাঙচুরের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার জানান, বিএনপির তিনজনকে সকালে আটক করা হয়েছে। তাদের নামে মামলা করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি হরতালের। শহরের ভেতরে ও জেলা সদর থেকে উপজেলার যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে শহরে বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল সাড়ে ১০টায় কলাবাগানের ভাঙ্গাব্রিজ মোড়ে বিএনপির কয়েকজন কর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও এর অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের ৭০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
হরতালকে সামনে রেখে শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আর বিএনপির ডাকা হরতাল ছিল নিরুত্তাপ।
কুমিল্লা: সকাল ৮টায় কুমিল্লা নগরের চকবাজার এলাকায় বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করারও দাবি উঠেছে। এছাড়া এসময় আহত হয়েছেন ২০ জন।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও পুলিশের মারধরে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
তবে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় মিছিল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হচ্ছে। জেলার নয়টি উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
সকাল ৮টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার একটি সড়কে গাছের গুঁডি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন হরতাল সমর্থকরা। দুপুর সোয়া ১টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে বিএনপির ১৫-২০ জন নেতাকর্মী হরতালের সমর্থনে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। জেলা বিএনপি অভিযোগ করেছেন, তাদের ২৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
সকালে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ওমর ফারুক টফি জানান, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে নোয়াখালী ফেরার পথে লাকসাম, সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি এ জেড এম গোলাম হায়দার জানান, ঢাকায় আমাদের ২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এখন বাড়ি ফেরার পথে আরও ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক নেতাকর্মীরা নিরপরাধ। আমি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
গোপালগঞ্জ: হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলচল করেছে। জেলা ও উপজেলা সদরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তবে গোপালগঞ্জ ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা ছিল কম।
আওয়ামী লীগের পক্ষে জেলা ও উপজেলা সদরে হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সকাল ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের করা হয়।
মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবউদ্দিন আজমসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীতে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
ফরিদপুর: গতকাল ২৭ অক্টোবর রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুইটি লোকাল বাসে তল্লাশি করে বিএনপি-জামায়াতের ৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আটকরা ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ভাঙ্গা হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তাররা ভাঙ্গা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোর জেলার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। তারা ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এছাড়া যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়, তারা সবাই বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি। আটকদের রোববার দুপুরে ফরিদপুরের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে ফরিদপুরের আদালত চত্বরে সকালে আইনজীবী ফোরামের মিছিল থেকে পাঁচজন আইনজীবীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটকরা হলেন- জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু, অ্যাডভোকেট তারেক আইয়ুব খান, জাহিদুল ইসলাম লাবলু, খসরুল আলম ও অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ জলিল বলেন, হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ওই পাঁচ আইনজীবীকে আটক করা হয়েছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ দলটির ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর থানায় চারজন, ঘোড়াঘাটে নয়জন, বিরামপুরে ১২ জন, বিরলে দুজন, কাহারোলে একজন, চিরিরবন্দর তিনজন, পার্বতীপুরে দুজন, বীরগঞ্জে দুজন ও নবাবগঞ্জে তিনজনসহ মোট ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান ও বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামান রয়েছেন।
বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে শহরের জেল রোডে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে দুলালকে আটক করা হয়।
এদিকে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।
হরতালের ডাক দিলেও দিনাজপুরে কোনো দলের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনাজপুরের কোথায় কোনো দলের মিছিল কিংবা পিকেটিং চোখে পড়েনি। হরতাল ডাকা হলেও জনজীবনে প্রভাব নেই কোনো। যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবেই। এছাড়া শহরের সব ধরনের দোকান পাট রাখতে দেখা গেছে।
এদিন সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের কলেজ মোড়, বাসস্ট্যান্ড, সুইহারী মোড়, হাসপাতাল মোড়, লিলির মোড়, মডার্ন মোড়, জেলরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে জেলা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস দিনাজপুরে আসতে বা ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। জেলার রাস্তাঘাটগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে বিএনপির ৪৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২৯ অক্টোবর জেলা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, জেলা জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের
সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ও সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মির্জাপুরে বিএনপির চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও রোববার সদর উপজেলায় বিএনপির তিন ও মির্জাপুরে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তারদের নতুন একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
গাইবান্ধা: হরতালে পিকেটিংকালে জেলা বিএনপির পাঁচজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিকেলে জেলা শহরের পৌরপার্কের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, জেলা যুবদলের সভাপতি রাকিব হাসান চৌধুরী, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শফিকুর রহমান খোকা, শহর বিএনপির কর্মী আব্দুস ছাত্তার ও হিল্লোল।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক ওই পাঁচ নেতাকর্মীকে আগামীকাল সোমবার (৩০ অক্টোবর) আদালতে পাঠানো হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকায় হরতাল চলাকালে জেলার কোথাও বড় ধরনের কোনো নাশকতা হয়নি।
লালমনিরহাট: সন্ধ্যায় শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়ে অবস্থিত লালমনিরহাট জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ‘হামার বাড়ি’তে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শ্রমিক নেতার মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে সন্ধ্যায় এ হামলা করা হয়।
হরতালে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর রেলগেট এলাকায় সকালে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে চারজন আহত হন। বিকেলে আহতদের একজন লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান আওয়ামী লীগ নেতারা। হরতালকে কেন্দ্র করে জেলায় পৃথক ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিএনপি। একই সময় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলটি বুড়ির বাজার মসজিদ এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। এসময় বিএনপি অফিস থেকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় আওয়ামী লীগের ধাওয়ায় বিএনপি পিছু হটলে তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করের শান্তি মিছিলের নেতাকর্মীরা। এতে অফিসের চেয়ার টেবিল, বিলবোর্ড, পোস্টার ভেঙে ফেলা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
একই সময় লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়, বড়বাড়ি ও মহেন্দ্রনগর বাজারে হামলা পিকেটিং করে পুলিশের দুটিসহ পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিএনপি। এতে ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকে দলটি। তবে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার আগে কাকরাইল ও বিজয়নগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির কর্মীরা। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহতও হয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিক, পুলিশ সদস্যসহ অনেকে আহত হয়েছেন। ‘শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে’ বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে ওই কর্মসূচি মঞ্চ থেকেই রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। তাদের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াতসহ সমমনা অন্য দলগুলোও হরতাল ডাকে। এ ঘোষণার পরই একই দিন সারাদেশে শান্তি সমাবেশ ডাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
এইচএ/এসএম/এসআরএস এসআই