ঢাকা: বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি নির্বাচনে এলেই ঝুঁকি বাড়বে। দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে যেকোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
সরকারে থাকা দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো প্রশ্ন এড়াতে এ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে আনতে হবে- এমন কোনো প্রয়োজন দেখছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি নিজ থেকে নির্বাচনে আসুক- এটাও চায় না ক্ষমতাসীনরা।
কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা, অস্থিরতা তৈরি করেছে তা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলমান। যদিও গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে সরকার।
পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে শেষ মুহূর্তে বিএনপি যদি নির্বাচনে চলেই আসে নতুন করে সমস্যা বাড়বে। তখন তারা নির্বাচনের ভেতরে থেকে তা বানচাল করার চেষ্টা করবে, না পারলে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তা ছাড়া নির্বাচনের মাঠে সহিংসতা তৈরির বিভিন্ন সুযোগ খুঁজবে তারা।
নেতারা আরও মনে করেন, নির্বাচনে নেমে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নিজেদের কর্মীদের উস্কানি দিয়ে সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টা করবে। এতে নির্বাচন কেন্দ্রিক বড় ধরণের সহিংসতা অনিবার্য হয়ে উঠবে৷ নির্বাচনের অংশ হয়ে ভেতর থেকে আরও বেশি সংকট তৈরির সুযোগ পেয়ে যাবে। এতে সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন আরও ঝুঁকিতে পড়বে। সহিংসতার নির্বাচন হিসেবে যেটা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো আরও জানায়, আইনগতভাবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ঠিক রাখা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। সেদিক থেকে ইসি ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের উপরেই সব দায় আসবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে এবং এর বিরোধিতাই করছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উল্লেখ করে নাম না প্রকাশের শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, পরিবেশটা যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে বিএনপি নির্বাচনে এলে আরও সমস্যা আছে। তারা না এলেই আওয়ামী লীগের জন্য ভালো। তারা নির্বাচনে এলে শত শত কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটাবে। নির্বাচন বানচালের বিষয়তো রয়েছেই। আসলে তাদের একমাত্র টার্গেট নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনেও তারা এক একটা আসনে দুই, তিনজন করে মনোনয়ন দিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যসহ বার বার তার বক্তব্যের তুলে ধরেছেন।
গত ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত বিএনপি সিট পাবে না বলে নির্বাচন করবে কিনা সন্দেহ। আর নির্বাচনে আসবে মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য। ওদের চক্রান্ত হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করা, নির্বাচনে নানাভাবে গোলমাল করার চেষ্টা করবে।
বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না এবং প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে বিবেচিত হবে- এমন অভিযোগ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যায় থেকে চলে আসছে। নির্বাচন নিয়ে বিদেশি তৎপরতা নানাভাবে অব্যাহত। কিন্তু বিষয়গুলোকে পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলটি বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে, প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ বিদেশিরা তাদের প্রতি যে সহানুভূতি দেখিয়েছিল, আগে যতটুকু ছিল গত ২৮ অক্টোবর তারা যে সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এরপর আর সেই সহানুভূতি নেই, সেটা কেটে গেছে।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি অতীতে ক্ষমতায় ছিল, দলটির কিছু সমর্থক গোষ্ঠী তো আছেই। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে সেই সমর্থকরা তো প্রশ্ন তুলতেই পারে। তবে তারা না এলে নির্বাচন হবে না, গ্রহণযোগ্য হবে না এটা হতে পারে না। বিদেশিদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাক না গলিয়ে, এ দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে দৃষ্টি না দিয়ে গাজা, ইউক্রেনের দিকে দৃষ্টি দেক। সেখানকার মানুষ অনেক সমস্যায় আছে। বাংলাদেশ ভালো আছে, ভালোভাবেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন নিয়ে বার বার নিজের অবস্থান জানান দিলেও বিদেশি তৎপরতা বিদ্যমান। একে ক্ষুব্ধ সরকার। বিশেষ করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলেও জানা গেছে।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে হস্তক্ষেপের মতো কথা বললে বা চেষ্টা করলে বা যা-ই করুক, সরকারও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে যাবে।
বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের তৎপরতায় সরকারের ক্ষুব্ধ মনোভাব তুলে ধরেন। বিদেশিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি ভিয়েনা কনভেনশনের কথা উল্লেখ করেন। অতীতে কিছু রাষ্ট্রদূতকে তাদের কার্যপরিধি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন তারা সেটির পুনরাবৃত্তি করলে প্রভাব আরও বেশি হবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২৩
এসকে/এমজে