ঢাকা: রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অভিমুখে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের ধারণা পেশ করেছে। জাতীয় সরকারের ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান সংবিধানের মান্যতাও রক্ষা করা যাবে একই সঙ্গে চলতি সংকট থেকেও উত্তরণ হওয়া যাবে। আর জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে যদি সংবিধানের কোনো সংশোধনীও প্রয়োজন হয়, সে সুযোগও রয়েছে। অতীতে কারণে অকারণে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশন কোনো দলীয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার সংবিধানের জব করে, অথচ এ দুই প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে তারও যদি অনুসরণ করা হয় তাহলেও জাতি সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে। অথচ আমরা কি দেখলাম? সিইসি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের মতোই কথা বলছেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের চাহিদামতো তড়িঘড়ি করে বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে একটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পাঁয়তারা করছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনারা জাতীয় নির্বাচনের কোনো তফসিল ঘোষণা করবেন না। আপনাদের প্রতি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের কোনো আস্থা নেই। আপনারা দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট আর বাড়াবেন না। তফসিল ঘোষণা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় আপনাদেরই নিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, দেশে নির্বাচন করার মতো কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি হয়নি, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ কখনোই হবে না। অতএব আপনারা পদত্যাগ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করুন।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো: অনতিবিলম্বে চলতি সংসদ ভেঙে দিয়ে সব প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা বিরোধী দলের সব নেতাকর্মী এবং ওলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন করতে হবে। দলান্ধ এ নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোনো অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো: নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল। তফসিল ঘোষণার পরের দিন সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন। জাতীয় সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংলাপ শেষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নুরুল হুদা ফয়েজী, আশরাফ আলী আকন, মাহবুবুর রহমান, মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস