খুলনা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বাদ রয়েছে কেবল কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনীত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেই ঘোষণায় জানা যায়, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি সংসদীয় আসন থেকে কপাল পুড়েছে ৩ সংসদ সদস্যের। মনোনয়ন পাননি তারা। এরা হলেন- খুলনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও খুলনা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু।
বয়স কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয় নেতা কর্মীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগে এবার তারা মনোনয়ন পাননি বলে দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
খুলনা-১ (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। যে কারণে দলীয় কার্যক্রমে তিনি অংশ নিতে পারছেন না। এমনকি সরকারি কাজেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন। এতে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ কারণে একাধিকবারের এই সংসদ সদস্য এবার নৌকা থেকে ছিটকে পড়েছেন।
এখানে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল।
খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) আসনে দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তবে নানা কারণে এবার তিনি নৌকার মনোনয়ন পাননি।
তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
এছাড়া বিগত দিনে বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা হয়। খুলনার দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ এনে মামলা দুটি করা হয়।
এ আসনে এবার মনোনয়ন পেলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসন থেকে বাদ পড়েছেন সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু। আক্তারুজ্জামান বাবু তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ২৩টি প্রকল্পের ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পান। মেয়াদ বাড়িয়েও এর মধ্যে ২০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।
নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। তবে সংসদ সদস্য নিজেই ঠিকাদার হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা যথাযথ তদারকি করতে পারেন না। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় বাঁধ পরিদর্শনে গেলে ক্ষুব্ধ জনগণ এমপির উদ্দেশ্যে কাঁদা ছোড়ার ঘটনা দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে পরিণত হয়। জরুরি ভিত্তিতে (ডিপিএম) বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দের ১০ শতাংশ করে তাকে দিয়ে কাজ নিতে হতো বলে ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া পছন্দের ঠিকাদার না পেলে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আলিসান গাড়ি-বাড়ি করেও আলোচনায় ছিলেন তরুণ এ সংসদ সদস্য। এসব কারণে এবার নৌকা থেকে ছিটকে পড়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
এবার এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. রশীদুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
এমআরএম/এসএএইচ