ঢাকা: বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, এ বাজেটকে জনবান্ধব বলা যায় না। পরোক্ষ করের কারণে জনগণের মাথায় করের বোঝা বাড়বে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর সংসদ টানেলের পাশে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
জি এম কাদের বলেন, বাজেট হয়েছে গতানুগতিক। গেলো কয়েক বছর যা হয়েছে, তার বাইরে বিশেষ কিছু নেই। দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যস্ফীতি, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আছে বেকার সমস্যা। বৈদেশিক মুদ্রা যা আয় করছি, ব্যয় হচ্ছে তা চেয়েও বেশি। রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে। এতে আমাদের টাকার দাম কমছে। এসব থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করছি না।
তিনি বলেন, বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের চেয়ে আয় হচ্ছে অনেক কম। রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি। ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঘাটতি।
তিনি আরও বলেন, ঘাটতি মেটানো হচ্ছে দেশি ও বিদেশি ঋণ দিয়ে। ঋণ নিয়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে। ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি বৈদেশিক ঋণ থেকে সুদ দেয়ার পরে আমরা ব্যবহার করতে পারছি ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণভাবে ঋণ করতে হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ও ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে।
জাপার এ নেতা বলেন, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন ঋণ করা হচ্ছে, তার সুদ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে। পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে। ৬২ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর, বাকিটা পরোক্ষ।
তার অভিযোগ, সাধারণ মানুষের ওপর করোর বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আয়কর মাত্র ৩৬ শতাংশ, আমদানি শুল্ক ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং সম্পূরক শুল্ক ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ, যা রিকশাওয়ালা থেকে ভিক্ষুকদেরও দিতে হবে। গরিবদের বাঁচানোর জন্য কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ছে না।
জি এম কাদের বলেন, হতদরিদ্র মানুষের জন্য যেটুকু দেওয়া হয় তা নিয়ে বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। যারা সহায়তা পাওয়ার কথা, অপচয় ও দুর্নীতির কারণে তারা পান না। সরকার যাকে অর্জন বলছে, তা দুর্নীতি বা লজ্জাজনক। সরকার বলছে বিদ্যুৎ ৩০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট দরকার হলেই লোডশেডিং করতে হয়। সারাদেশে লোডশেডিং চলছে।
তিনি বলেন, ১৫ হাজারের পরে বাড়তি ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন না হলেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বসিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সেসব প্লান্টকে। জনগণের ক্ষতির কারণগুলোকে লাভজনকভাবে দেখানো হচ্ছে। অথচ এখনো সবাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার, কিন্তু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়নি। এতে আমাদের বিপুল অংকের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত হুমকির মুখে আছে।
এ সময় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মো. মুজিবুল হক চুন্নু, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৪
এসএমএকে/আরএইচ