ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নৈরাজ্যের দায়-দায়িত্ব অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর না চাপিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। এই সরকার রাষ্ট্রঘাতী, প্রাণঘাতী, গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনে গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী কায়দায় গণহত্যা ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। আজকেও এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। গতকালও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার, নির্যাতন চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেও সরকার পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ন্যক্কারজনকভাবে বাধা দিয়েছে এবং হামলা চালিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে শতাধিক নিরীহ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের একত্রিতও হতে দেয় নাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পাহারার নামে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার জমায়েত করে ভীতিকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সরকার। দেশে জরুরি অবস্থা জারি না করা সত্ত্বেও সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ না করতে দেওয়া এবং হামলা-গ্রেপ্তার করা সরকারের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিরাপত্তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্যান্য সমন্বয়কদের হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে তুলে এনে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করে ডিবি কার্যালয়েই নজিরবিহীনভাবে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিয়ে তাদের দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করানোর নাটক সাজানো হয়েছে। ডিবি হেফাজতে রেখে সমন্বয়কদের ওপর চাপ দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার নাটক সাজানো হলেও সাধারণ ছাত্রদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ছিল না। সরকার কত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে, তা ডিবি হেফাজতে আটক রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর বল প্রয়োগ করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করার ঘটনায় অনুমান করা যায়। ডিবি কার্যালয়ে তাদের হেফাজতে রেখে বল প্রয়োগ করে ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করতে চায় সরকার।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সমন্বয়করা আটক নয়, একথা ডিবিপ্রধান বললেও তাদের কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না? কেন তাদের অভিভাবকদের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? ডিবি কার্যালয় নিশ্চয়ই সরকারি বিশ্রামখানা, অতিথিশালা বা খাবার হোটেল নয়। প্রায়ই ডিবি কার্যালয়ে রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যান্যদের ডেকে নিয়ে বা তুলে নিয়ে খাবার টেবিলে ছবি তুলে তা গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও সর্বোচ্চ আদালত থেকে ডিবিপ্রধানের এই অযাচিত কর্মকাণ্ডকে ‘জাতির সাথে মশকরা’ অবিহিত করা হয়েছে। জাতির সাথে তামাশা, মশকরা করার জন্য অবৈধ সরকার সরকারি এই সংস্থাকে দিয়ে তার রাজনৈতিক হীন স্বার্থ উদ্ধারে অপব্যবহার করছে। ডিবি হেফাজতে থাকা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। নজিরবিহীন এসব ঘটনা প্রমাণ করে আন্দোলনের শোচনীয় পরিণতির ভয়ে ভীত সরকার প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অপব্যবহার করে পার পেতে চাচ্ছে। শত শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই আন্দোলন বৃথা যেতে পারে না। সরকারের এই উদ্যোগ বুমেরাং হবে এবং নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরকারের বর্বরতা বিশদভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট নয়, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র সরকার, যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে নিরপরাধ মানুষ, ছাত্র, যুবক, নিষ্পাপ শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমি অবিলম্বে কার্ফু প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজনীতিকে উন্মুক্ত করা, নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন বন্ধ, গ্রেপ্তার নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
টিএ/এমজেএফ