ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পেরোলো। এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তার সঙ্গে সঙ্গে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীও তাৎক্ষণিকভাবে আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপন অবস্থায় ওই সময় অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান। দেশ ছেড়ে যাওয়া নেতাদের অধিকাংশই ভারতে গেছেন। আবার কেউ কেউ ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে চলে যান।
আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার প্রকাশ্যে এলে হামলা হতে পারে বা জীবনের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে, এমন আতঙ্ক এখনো তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। অনেকের ক্ষেত্রে আত্মগোপনেও বেশিদিন থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘ তিন মাস আত্মগোপনে থাকায় তারা অর্থনৈতিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন সংকট ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এখন তারা কী করবেন, আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। সম্প্রতি জেল হত্যা দিবসসহ দলের দুই একটি দিবসে কেউ কেউ স্বল্প পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেও সফল হননি।
তাছাড়া এখন পর্যন্ত কর্মীদের প্রতি দলের কোনো স্পষ্ট দিক-নির্দেশনাও নেই। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দুই একজন নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কখনো কখনো তাদের মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছে। ওই নেতারা যখনই যার সঙ্গে কথা বলছেন, তাকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কর্মীদের বলছেন, অপেক্ষায় থাকতে হবে। অপেক্ষা আর পর্যবেক্ষণ ছাড়া এখন কিছু করার নেই। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এজন্য আরও সময়ের প্রয়োজন।
এর মধ্যে অবশ্য গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে এমনকি নিজ এলাকাতে থাকবেন না। বিনা মামলায় গ্রেফতার এড়াতে আপনার ব্যবহৃত সিম বন্ধ রাখুন। ’
এদিকে ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের প্রায় সব পর্যায়ের নেতার নামেই মামলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে সারা দেশের বিভিন্ন আদালতে প্রায় আড়াই শ’র মতো মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগও দাখিল হয়েছে এবং সেজন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অন্য অনেক নেতার নামেও প্রায় শতাধিক করে মামলা হয়েছে বলেও জানা যায়।
যে মন্ত্রী-নেতারা গ্রেপ্তার
এর মধ্যে এখন পর্যন্ত হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন মামলায় অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, হাজী মো. সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ, সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবের হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইলাম, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্রমুখ। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪ দলের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
এদের মধ্যে অবশ্য এম এ মান্নান ও সাবের হোসেন চৌধুরী জামিন পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৬৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২৪
এসকে/এইচএ/