ঢাকা: উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন। তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে নেতা-কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, ফিরোজার সামনের সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন। বিকেল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতিও বাড়ছে।
‘ফিরোজা’ থেকে রাত ৮টায় বেরিয়ে একটি গাড়িতে করে গুলশান ২-এর গোল চত্বর ও বনানী-কাকলী হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাবেন খালেদা জিয়া।
বিমানবন্দরেও তার আগমন ও বিদেশযাত্রা ঘিরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তায় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের পাশাপাশি থাকবেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ডিবি ও সোয়াটের মতো স্পেশাল টিমের সদস্যরা। এছাড়া অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও থাকবেন নিজ নিজ দায়িত্বে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরের রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়। পরে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হসপিটালেই লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেয়।
সে হিসাবে তিনি আজ লন্ডন যাচ্ছেন। সেখানে ‘লন্ডন ক্লিনিক’–এ ভর্তি হতে পারেন খালেদা জিয়া। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তিনি যেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রেও।
খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির রাজকীয় বহরের এক বিশেষ ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ পাঠিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ১০টায় ঢাকা ত্যাগ করবেন খালেদা জিয়া। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দোহা এবং দোহা থেকে লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া।
ওই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বু্লেন্স হলো দ্রুতগামী এয়ারবাস। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা। ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি এই অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য এই উড়োজাহাজে যাবেন। তারা হলেন শাহাবুদ্দিন তালুকদার, এফ এম সিদ্দিক, নূরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মোহাম্মদ আল মামুন।
এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছেন।
খালেদা জিয়া ২০১৭ সালের জুলাই মাসের পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর করছেন। ফলে লন্ডনে প্রায় সাত বছর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে খালেদা জিয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৫
ইএসএস/এইচএ/