ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

বাংলানিউজকে আমির হোসেন আমু

৭ মার্চের ভাষণ এখনও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
৭ মার্চের ভাষণ এখনও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ

ঢাকা: আর্ধশত বছর আগে মুক্তির আকাঙ্খায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন আজকের প্রেক্ষাপটেও তাঁর সেই ভাষণ প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যবহন করে বলে মনে করেন প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু।

সেই সময়ের উদীয়মান এই আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং তৎকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ও কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া প্রতিটি কর্মসূচি ও নির্দেশ বাস্তবায়নে যারা অগ্রভাগে থেকে কাজ করেছেন তাদের একজন আমির হোসেন আমু।  
 
বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের অভূতপূর্ব আর্কষণের কথা উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, মানুষের আগ্রহ ছিলো বঙ্গবন্ধু কী বলবেন, তার কাছ থেকে কী নির্দেশনা আসবে। আমরা তার রাজনৈতিক কর্মীরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম যে কোনো ঘোষণা আসতে পারে। সেই দিন বিভিন্ন ধরনের রিউমার ছিলো, আতঙ্ক ছিলো বোম্বিং হতে পারে, সেনা-পুলিশ গুলি চালাতে পারে। কিন্তু মানুষ কোনো কিছুর ভয়ে ভীত হয়নি, স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমাবেশে এসেছিলো। ভাষণে একদিকে বঙ্গবন্ধু যেমন ট্যাক্স, খাজনা বন্ধসহ বিভিন্নভাবে অসহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছিলেন, পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা তৎপরতা ও এর জন্য প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা। ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথ নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি তিনটি অধ্যায় রচনা করেছিলেন। প্রথম অধ্যায়ে ছিলো পাকিস্তানের দুঃশাসন এবং নির্যাতনের ইতিহাস। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ছিলো ১ মার্চ যে দিন ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করলো সেই থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনগণের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর যেভাবে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে, মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ। তৃতীয় অধ্যায় ছিলো মূল অধ্যায়, অর্থাৎ করণীয়। সেই করীয় জায়াগায় এসে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করে তিনি ব্যাখা দিয়েছিলেন স্বাধীনতাকে যাতে অর্জন করা যায় তার জন্য একটি গেরিলা যুদ্ধের রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তিনি জানতেন, হয় তাকে গ্রেফতার করা হবে অথবা তাকে মেরে ফেলা হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে। চিরদিনের জন্য রাস্তা-ঘাট সব কিছু বন্ধ করে দেবে। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। ’ তাঁর প্রতিটি কথার মধ্যেই ছিলো একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন।

বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা, দিকনির্দেশনা মুক্তিকামী বাঙালিকে আরও উজ্জীবিত করেছিলো, জীবন বাজি রেখে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিলো মন্তব্য করে আমু বলেন, মানুষ যেনো এ রকম একটি দিকনির্দেশনাই প্রত্যাশা করেছিলো। আমরা যারা উনার কর্মী, ৩ মার্চের পল্টনে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। আমরা তো তখন থেকে প্রস্তুত ছিলাম যে কোনো ঘোষণার জন্য। এর পর থেকেই আমরা সব জায়গায় সদ্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল, মিটিং করতাম। বিভিন্ন স্থানে ট্রেনিং ক্যাম্প করা হয়েছিলো, সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলতো। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের আগেই বলেছিলেন, ৬ দফা এখন আর আমার না, এটা জনগণের হয়ে গেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সেইটাই তিনি ৭ মার্চে ঘোষণা করেছিলেন।

প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে গ্রামে গ্রামে মহল্লায়, মহল্লায়, শহরে, বন্দরে সব জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার হুকুম দিয়েছিলেন। তিনি জনগণকে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেন। এখানে শত্রু হিসেবে তিনি পাকিস্তানিদেরকে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা তাদের ভাতে মারবো, পানিতে মারবো। গেরিলা যুদ্ধের বিভিন্ন রূপরেখার এ একটি অংশ, এই কথার মধ্য দিয়ে তিনি গেরিলা যুদ্ধের রূপরেখা স্পষ্ট করেছিলেন। আজকে যারা যে কথাই বলুক, সেই দিনের সেই ঘোষণাই কিন্তু বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলো ২৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।

আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু সেই দিন ভাষণে ট্যাক্স, খাজনা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, তার সেই অসহযোগ আন্দোলন ছিলো পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ অসহযোগ আন্দোালন। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে, তখন ভারতের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ইতিহাসবিদ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা বলতেন, মহাত্মা গান্ধীকে বলা হয় অসহযোগ আন্দোলনের শ্রষ্টা, কিন্তু তার আন্দোলনও সফল হয়নি, যেভাবে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সফল হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি ৭ মার্চে জনগণকে প্রস্তুত থাকার যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সে কারণেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এর পর দেশের জনগণ এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেনি। তার সেই ঘোষণা অনুযায়ী অহসযোগ আন্দোলনরত জাতি সশন্ত্র জাতিতে পরিণত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই তারা দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলো। সেই ভাষণই ছিলো প্রকৃত অর্থে জাতির জন্য, জনগণের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথ নির্দেশনা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটেও বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করি এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করি, তখন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ খণ্ড খণ্ডভাবে বাংলাদেশ বেতারে যাতে প্রচার হয় সে জন্য শফিউল্লাহরর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আমাদের নেতা আব্দুল মান্নান, জিল্লুর রহমানদেরকে বলেছিলেন। এই ভাষণ বাজানো হলে সৈন্যরা উজ্জীবিত হবে। তখন ৭ মার্চের ভাষণ খণ্ড খণ্ড আকারে প্রতিদিন বাংলাদেশ বেতারে বাজানো হতো। স্বাধীন দেশে এখনও কিছু পাকিস্তানপ্রেমী আছে। তারা এখনও বোঝাতে চায়, পাকিস্তান ভাঙা ভুল ছিলো। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ এখনও প্রসঙ্গিক, আজকের দিনেও এটি তাৎপর্য বহন করে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বোঝতে সব সময়ই এটি প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘন্টা, মার্চ ০৭, ২০২২
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।