ঢাকা: যারা রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন করছে তাদের জীবিকার ওপর আঘাতের পদক্ষেপ নিলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর পুরাতন পল্টনের মুক্তি ভবনের সভা কক্ষে ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার সংকট ও নিরসনের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম বাহন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক। কোটি কোটি মানুষের যাতায়াত সেবায় নিয়োজিত এ খাতের ৫০ লাখ শ্রমিক। তাদের জীবিকা রক্ষা ও উন্নত করা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব পালন না করে তাদের জীবন-জীবিকাকে নানাভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শ্রমিকের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়া শুধু অমানবিক নয়, বৈষম্যের নীতিতে পরিচালিত রাষ্ট্রের শ্রমিকের প্রতি বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর দেশের অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। নৌ-রেল সেবাসহ, গণপরিবহনের সেবা খাতের উন্নতি না করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক বন্ধের চেষ্টা দেশের অগ্রগতির জন্য আত্মঘাতী হবে।
সিপিবির সাবেক এ সভাপতি বলেন, সরকার মানুষের কাজের নিশ্চয়তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে যারা রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন করছে তাদের জীবিকার ওপর আঘাতের পদক্ষেপ নিলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাম-গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহম্মদ আজম, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম প্রমুখ।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, রাষ্ট্র শ্রমিকদের শোষণ করে বড়লোকদের বড়লোক হওয়ার পথ আরও মসৃণ করছে। রাষ্ট্রের এ শোষণ-বৈষম্যের চরিত্র শ্রমিক আজ বুঝতে শিখেছে। শ্রমিক এ বৈষম্যের শিকল ছিন্ন করে শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করবেই।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উচ্চ বেকারত্বের এ দেশে রিকশা-ভ্যান-ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি উন্মুক্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। আরও কয়েক কোটি মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা মেটায় এসব পরিবহন। জিডিপিতে তাদের অবদান ৩ শতাংশ, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে তারা বিশাল অবদান রাখে। অথচ এ বিশাল অবদানের জনগোষ্ঠী অব্যাহত রাষ্ট্রীয় অপবাদ, নিপীড়ন, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি এবং সরকারের স্বেচ্ছাচরিতার শিকার। এ শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজন বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলোর মান উন্নয়ন, তাদের কাজ নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
সাইফুল হক বলেন, শ্রমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাষ্ট্রের সব শোষণের অবসান ঘটাতে হবে। শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে শ্রমিকরাই অগ্র ভূমিকায় থাকবে।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি বৈধভাবে তৈরি, যে যাত্রী সে বৈধ, যে চালায় বৈধ নাগরিক, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আছে চলার। এ রিকশার সবকিছু বৈধ ফলে রিকশাও বৈধ। অবৈধ হলো পুলিশের ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি। মালিক, শ্রমিকসহ সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা শ্রমিকের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ‘জীবিকা সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন ও অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইকের বুয়েট প্রস্তাবিত মডেলে আধুনিকায়ন করে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
আরকেআর/আরবি