সিলেট: জেলা বিএনপির ইফতার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও সিলেট মহানগর বিএনপির ইফতার আয়োজন অতিথি নিয়ে ঘটলো তুলকালাম কাণ্ড। একপক্ষের হাতে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরীকে।
প্রতিপক্ষ দলীয় নগরের আম্বরখানা ও চৌখিদেখি এলাকা থেকে আসা একদল নেতাকর্মী সভাকক্ষে এমদাদ হোসেন চৌধুরীকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন। এমনকি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরের একটি ঘরের এনে মারধরও করা হয়। এতে এমদাদ চৌধুরী আহত হন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে নগরের ভাতালিয়ায় সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
দলীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে অতিথি করা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধে। লন্ডন থেকে নির্দেশনা আসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকুকে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি করতে। কিন্তু একটি পক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে অতিথি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকুকে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি করা হলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের অবস্থান প্রটোকলে নিচে নেমে যাবে। যে কারণে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণ করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান জুয়েল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহিদ সোহেল ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামালসহ তাদের বলয়ের নেতাকর্মীরা।
এ সময় তাদের মতের বিরোধিতা করেন মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ চৌধুরী। এ নিয়ে রাত ১২টার দিকে আম্বরখানা চৌখিদেখির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সভাকক্ষে এমদাদ হোসেন চৌধুরীকে ডিম নিক্ষেপ করেন। তার ওপর ছোঁড়া ডিম অন্যদের ওপরও পড়ে কাপড় নষ্ট হয়।
এরপর হামলাকারীরা এমদাদ চৌধুরীকে নেতাদের সামনে দিয়ে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করে মারধর করেন। এ ঘটনায় উপস্থিত অনেক নেতা বেরিয়ে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও মারধরের সময় ভয়ে প্রতিবাদ করতে যাননি।
এ বিষয়ে লাঞ্ছিত মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীমের অনুসারী মাদকসেবী কামাল হাসান জুয়েলকে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নেতাকর্মীর অনেকের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করা কামাল হাসানের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর তথ্য-প্রমাণ দিতে গিয়ে গত বছরের ৯ মে মদসহ সিলেটে র্যাবের হাতে কামাল হাসান জুয়েলের আটকের ছবি সরবরাহ করা হয়।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, তাকেই কিনা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলেরসহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। মূলত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। কামাল হাসান জুয়েলের বাড়িও একই উপজেলায়। যে কারণে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মালেকের প্রেসক্রিপশনেই একজন ‘মাদকসেবীকে’ স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। এর চেয়ে নির্লজ্জ আর কী হতে পারে?
এটি দলের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করে নেতাকর্মীরা বলেন, ইফতার মাহফিলে অতিথি করার মতের অমিল নিয়ে মহানগর বিএনপি নেতার ওপর হামলার ঘটনা দলের চেইন অব কমান্ডে ভাঙন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
এনইউ/এএটি