ময়মনসিংহ: বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তবে দেশের কে সরকার থাকবে, কে আসবে- তা ঠিক করবে দেশের জনগণ।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, সৎ বন্ধু চাই। কিন্তু কর্তৃত্ব মানব না। দিল্লি থেকে মানসিংহ এসে পরাজিত হয়েছিল এই ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে।
সিদ্ধান্ত নিন দেশের মানুষের সঙ্গে থাকবেন, না লুটপাটকারীদের সঙ্গে থাকবেন। মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। দেশ কারো বাবার না।
রোববার (১৫ মে) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোড়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে এই সিনিয়র বিএনপি নেতা বলেন, দেশের মেঘা প্রকল্প থেকে দশ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অথচ তিনি কানে শোনেন না, চোখেও দেখেন না। ফলে দেশের গুণবতী প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশিরা আর বহন করতে পারছেন না। তারা তাকে ঘাড় থেকে নামাতে চায়।
তাই নতুন করে শপথ নেওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিন। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি, দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বলেছেন আগামী বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, ফয়সালা হবে রাজপথে। যার যার এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুর্গ গড়ে তুলুন। নীরবে আর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করা হবে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেশের সংবিধান আমাদের অধিকার দিয়েছে। সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও সাংবিধানিক অধিকার। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আর আমরা মার খাব না, যেখানে আক্রমণ হবে সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য নির্দেশ দিতে হবে না।
এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানে মানে কেটে পড়েন। দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফেরত দিন। দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, লুটপাটের কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ধানের মূল্য ৭শ টাকা। অথচ ধান কাটার একজন কামলার (শ্রমিক) মূল্য পনেরশ টাকা। মানে দুই মন ধানের দাম।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দেশে এখন আর সভা-সমাবেশে বাধা নেই। এর পরদিনই ড. মোশাররফ হোসেনের সমাবেশে হামলা হয়েছে। মূলত তারা যা বলে, তার উল্টো বুঝতে হবে। এটাই আওয়ামী লীগ।
সবাই বলছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ইভিএম দিয়ে লাভ কী? আমরা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করব না এবং সেই নির্বাচন হতে দেব না। জনগণ বার বার চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা ঠিক নয়, এখন সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময় যৌথভাবে সভা পরিচালনা করে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. ওয়ারেস আলী মামুন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নূরুল কবীর শাহীন, অ্যাড. আবুল বাসার আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু, অ্যাড.ফাত্তাহ খান, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, শাহ শিব্বির আহমেদ ভুলু, অ্যাড. এমএ হান্নান খান, দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক লিটন আকন্দ প্রমুখ।
এদিকে বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে জেলা সদরের বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নামে নগরী জুড়ে। ফলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নগরীর পথে পথে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ১৫ মে, ২০২২
এমএমজেড