মানিকগঞ্জ: রাজনৈতিক দর্শনে নয় মূলত ক্ষমতার লোভে বশবর্তী হয়ে আওয়ামী ছাত্রলীগের নেতা হয়ে গেলেন জেলার হরিরামপুর উপজেলার সভাপতি লুৎফর রহমান। এক সময় বিএনপি-জামায়াত সরকারের ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই মো. লুৎফর রহমানকে সভাপতি ও কামরুল হাসান ফিরোজকে সাধারণ সম্পাদক করে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৯৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার পরপরই নানা ধরনের অপকর্মে মদতদান ও সরাসরি নিজেই পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার পরপই পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে হরিরাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করায় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান সাইদুর রহমানের মধ্যস্থতায় পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়।
অন্যদিকে উপজেলা চত্বরে আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিয়াস মেহেদী ১৪৪ ধারা জারি করেন। বর্তমান আওয়ামী ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান এক সময় চার দলীয় বিএনপি-জামায়াতে সরকারের ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলের ‘ছাত্রদল’ লেখা ব্যান মাথায় বাঁধা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুধুমাত্র ততবির ও অবৈধ ক্ষমতায় লুৎফর রহমান বহাল থেকে যায় ওই কমিটিতে এমন অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার মর্মে একাধিক ছাত্রদলের নেতারা বলেন, ২০১৬ সালের আগে হরিরামপুর উপজেলার লুৎফর রহমান আমাদের সঙ্গে রাজপথে রাজনীতি করেছে কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তবে একটি বিষয় ভালো হয়েছে এই ধরনের সুযোগ সন্ধানী কালপিট আমাদের সঙ্গে এখন আর নাই। তবে এই শ্রেণির মানুষ যে দল করবে সেই দলের জন্য ভংঙ্কর, কারণ যেকোনো সময় নিজের স্বার্থের জন্য নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ভয়ঙ্কর কাজ করবে তাঁরা।
অন্যদিকে একাধিক পদবঞ্চিত নেতারাই জানান, আমরা এখন প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দিয়েছি কারণ ছোট সময় থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে ছাত্র রাজনীতিতে আসছিলাম কিন্তু আমাদের টাকা আর অবৈধ ক্ষমতা না থাকায় আমরা পদ পাইনি। কাউকে এখন আর কিছু বলতে সাহস পাইনা, বললে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করে ফেলতে পারে লুৎফরের সর্মথকরা।
অভিযুক্ত হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেন এরপর সাংবাদিক পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত আছি বলে কেটে দেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বে থাকলেও কমিটি গঠনের বিষয়ে আমাদের কারো সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। হরিরামপুর, দৌলতপুর এবং শিবালয় উপজেলার কমিটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয় বহিরাগতের প্রবেশ নিয়ে। যদি কোনো ছাত্রলীগের নেতা নিয়ে অভিযোগ থাকে এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারে তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে এমন প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, যদি এই ধরনের কোন ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত থাকে তবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী বুলবুল আহমেদ বলেন, আমার সময়ই হরিরামপুর উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় তবে আমরা যাচাই-বাছাই ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই কমিটি দিয়েছি। কমিটি দেওয়ার পরপরই লুৎফর রহমানের একটি ছবি আমাদের সামনে আসে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই দেখা যায় কেউ হয়তো ফটোশপের মাধ্যমে এই কাজটি করেছে। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আগের কমিটিতেও লুৎফর রহমানের পদ ছিল বলে উল্লেখ করেন এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।
হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, হরিরামপুরের ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে লুৎফর রহমানকে ছাত্রদলের মিছিল মিটিংয়ে দেখা যেতো এবং তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়। ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে আর এখন তিনি সন্ধ্যার পরপরই হয়ে যান মাদক সম্রাট।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি-তো অনেক আগেই হয়েছে। ছাত্র জীবনে কে কি করেছে এ বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু আমি জানি না।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম দেশের বাহিরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২২
এনটি