ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে জেলা ছাত্রলীগের গন্ডগোলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে। ফলে ছাত্রলীগের পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
তবে ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, মূলত ‘লাভজনক ওয়াকশন বাণিজ্য’ ইস্যুকে ঘিরেই এই গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও টেন্ডার সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে সমঝোতা করে আনন্দ মোহন কলেজের পুরাতন ৪টি ভবনের নাম মাত্র মূল্য নির্ধারণ করে টেন্ডার আহ্বান করে প্রিন্সিপাল মো. আমান উল্লাহ।
বিষয়টি জানতে পেরে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিলে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা হারুন রশিদ টিটু ওরফে কল্যান টিটু। সে অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ওয়াকশন কাজের লাভের একটি অংশ বন্টনের মৌখিক চুক্তি হয় বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কিন্তু এম এস কনস্ট্রাকশনের নামে ভ্যাটসহ মাত্র ছয় লাখ ৭৮ হাজার টাকায় কাজটি পাওয়ার পর ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা রাখেনি ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে মতানৈক্য হলে কাজে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। পরে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার টিটু জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীরের সঙ্গে দেখা করে এক লাখ টাকা দেয়। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা এতে খুশি না হয়ে টাকা ফেরত দিয়ে কাজে বাধা অব্যাহত রাখে। এতে শুরু হয় গন্ডগোল।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ন কবীর জানান, ঠিকাদার মাত্র ছয় লাখ টাকায় কাজটি পেয়ে ৩৭ লাখ টাকায় আরেক জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ঠিকাদার লাভবান হলেও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা আমাদের এক লাখ টাকা দিয়েছিল, কিন্তু আমরা সে টাকা ফেরত দিয়েছি। এরপরই ঠিকাদার ও তার লোকজন ষড়যন্ত্র করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এই নাটক সাজিয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার কল্যান টিটু। তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর আমি তাদের কাছে গিয়ে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এরপরও তারা কাজে বাধা দিলে গন্ডগোল সৃষ্টি হয়। ঠিকাদার আরও জানায়, কাজ আমরাই করছি। এখনও বিক্রি করিনি।
আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ জানান, ওয়াকশনের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। এখানে আমার কিছু করার সুযোগ নেই। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে টেন্ডার হয়েছে। এতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এম এস কনস্ট্রাকশন ছয় লাখ ৭৮ হাজার টাকায় কাজ পেয়েছে। এ নিয়ে যারা উল্টাপাল্টা বলছে, তা সঠিক নয়।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, টেন্ডার করেছেন কলেজ প্রিন্সিপাল। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
সূত্র জানায়, ওয়াকশনের ঠিকাদারি কাজে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে গতকাল ১২ জুন বিকেলে কলেজে ভেতরে বহিরাগতদের নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দেয় ঠিকাদারের লোকজন।
পরে খবর পেয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশাল বহর নিয়ে আনন্দ মোহন কলেজ ক্যাম্পাসে যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন ও সম্পাদক হুমায়ন কবীর এবং তাদের নেতাকর্মীরা।
এ সময় তারা কলেজ ফটকে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও স্থানীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের লোকজন দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় তাদের মুখোমুখি অবস্থান নিলে শুরু হয় দৌড়ঝাপ। এতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনায় মারমুখী অবস্থানের সৃষ্টি হলে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ ঘটনার জেরে সোমবার (১৩ জুন) দিনভর নগরীর আনন্দ মোহন কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
** ঠিকাদারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
আরএ