ঢাকা: বন্যার মধ্যে পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (১৯জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজী বন্ধ করুন। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করা হোক এবং কোনো বিলম্ব না করে জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আত্মপ্রচারে নিমগ্ন নিশিরাতের বেপরোয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদুরদর্শিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম- এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। অটো ভোটের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান শনিবার (১৮ জুন) স্বীকার করেছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি।
তিনি বলেন, বজ্রপাত, বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলায় ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের রেলস্টেশন, বিমান বন্দর পানির নিচে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বানের পানির নিচে থাকায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ। অন্ধকারে ডুবে আছে। মোমবাতিও মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটছে সিলেট-সুনামগঞ্জের বানভাসী মানুষের।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এই বন্যার আরও কারণ আছে। হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং সেতু দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে-তা ভেঙে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন মহাদুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদুর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বিভৎসতা! কি অমানবিকতা!
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানি বন্দি মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্ধ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত: ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা।
‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্ধ পায়নি বন্যার্তরা। ’ দাবি রিজভীর।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নীরব, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
এমএইচ/এসএ