ঢাকা: পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনার জন্য বাজেটে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছ তার সমালোচনা করে বিএনপি সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেই ঠিকই কিন্তু যুক্ত হয়েছে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয়। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ করা এবং দেশে ফেরত আনার নামে সব থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর ধার্য করে প্রশ্নাতীতভাবে সেগুলো প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কারণ যারা টাকা বিদেশে পাচার করে তারা ফেরত আনার জন্য টাকা পাচার করে না। এটি করা হয়েছে যাতে কখনও কোনো দেশ যদি এমন টাকা পাচারকারীদের ধর পাকড় শুরু করে তখন যেন তারা নিরাপদে টাকা দেশে আনতে পারে।
রোববার (১৯ জুন) জাতীয় সংসদে অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, টাকা ফেরত আনার জন্য নয় পাচারকারীদের নিশ্চয়তার জন্যই এ পদক্ষেপ। নিশ্চিতভাবেই এ পদক্ষেপ আরও অনেককে টাকা পাচারে উৎসাহিত করবে। শ্রীলংকার হাম্বল টোটায় সমুদ্র বন্দর প্রকল্প শুরু করার আগে নানা বিদেশি সংস্থা এবং শ্রীলঙ্কায় হাতে গোনা কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছিল কলমম্বো থেকে মাত্র ১৬৬ কিলোমিটার দূরত্বের এই বন্দরে কোন অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নাই। কিন্তু বন্দরটি এই এলাকার শিপিং হাবে পরিণত হয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে অসাধারণ সমৃদ্ধ করে তুলবে সেটা নিয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বহুবার বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, টেক চাপে পরে বন্দরটি শত বছরের জন্য লিজ নিয়ে দেবার পরও কিছু তথাকথিত বিশেষজ্ঞ এ প্রকল্পের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। লোভ আর ভয় মানুষকে কি না করায়। শ্রীলঙ্কার সেই সময়ের পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে। শ্রীলঙ্কার পর্যালোচনায় যখন বাংলাদেশের কিছু অর্থনীতিবিদ তাদের স্বার্থের চিন্তায় বা ভয়ে বলেছেন বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি হবার কোন সম্ভাবনাই নাই। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ আমাদের স্পষ্ট জানিয়েছেন বাংলাদেশের জন্য অবশ্যেই ঝুঁকি আছে। বাংলাদেশ যদি খুব সতর্ক না হয় তাহলে দ্রুতই শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হতে পারে।
রুমিন বলেন, অর্থমন্ত্রী ৬টি চ্যালেঞ্জের প্রথমটিতেই বলেছেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। এই খাতে যেটা চিন্তা করেছেন তাতে অর্থমন্ত্রীর অর্থনীতি বোঝাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। বর্তমান মূল্যস্ফীতি ডিমান্ড ফুল না। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়নি যে এর প্রবৃদ্ধি কমানো যাবে। করোনায় মধ্যবিত্ত থেকে নিচের দিকে প্রতিটি মানুষের আয় কমেছে। আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে তাহলে চাহিদা বাড়ে কিভাবে? গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে বড় অংকের টাকা আমদানির নামে ওভার ইনভয়েচিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। নির্বাচন এলেই এদেশে টাকা পাচার বাড়ে, এটি গ্লোবাল ফাইনান্স ইনটিগরিটির রিপোর্ট। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে টাকা পাচার ডাবল হয়ে গিয়ে এক লাখ কোটি টাকা ওই এক বছরেই পাচার হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে সরকার জাতিসংঘে আমদানি রপ্তানির তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। পাচারের এই তথ্য লুকানোর চেষ্টা প্রমাণ করে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এ পাচারের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই এই টাকার হিংসা পায়।
রুমিন বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প: গত বাজেটের মতো এবারও রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘনবসিতপূর্ণ দেশে কোনভাবেই যৌক্তিক ছিল না বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পটিতে দেশের মূলধন ব্যয় হবে ৫০ লাখ ডলার। ভারতে কুদাম কুলান বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রতি মেগাওয়াট ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ কেন্দ্রের মূলধন ব্যয় বাবদ হয়েছে লুটপাট হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্প ভয়ঙ্কর ঝুঁকি তৈরি করছে এই প্রকল্প। এরকম আর একটি ঝুঁকি হচ্ছে পদ্মায় রেল প্রকল্প। এর জন্য এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কল করা হয়েছে। যেটা বাড়বে আরও অনেক। পায়রা বন্দর করার প্রয়োজন ছিল না। রামু থেকে কক্সবাজার রেল দরকার ছিল না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ার পরও একের পর এক টার্ম ক্ষমতায় থাকার পর বাংলাদেশে চরম কর্তৃত্ববাদী অলিগর কিং বা গোষ্ঠী তন্ত্র কায়েম হয়েছে। বাজেটে শ্রীলংকা ঠেকানোর কথা থাকবার কথা ছিল না। নিজেদের আখেড় গুছিয়ে নিজেদের অনাগত বহু প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত রাজকীয় জীবন যাপন নিশ্চিত করার পর দেশ শ্রীলংকা হলে তাতে কি বা আসে যায় ক্ষমতাসীনদের।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
এসকে/এনএইচআর