সিলেট: দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে সরকার পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ যখন দুর্যোগে-খাদ্যাভাবে হাহাকার করছে, তখন সরকার পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসবে মেতেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণকালে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সিলেটের ৩০ লাখ বানভাসি মানুষের জন্য মাত্র ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অথচ পদ্মা সেতুর জন্য গান বাজনা হবে, কিন্তু জনগণ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। কারণ জনগণকে তারা তোয়াক্কা করে না।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল সিলেটবাসীর এ দুঃসময়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে নেই। গত দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সিলেটে এসে হেলিকপ্টারে ঘুরে গেছেন। তিনি সার্কিট হাউসে এসে মন্ত্রী-এমপিসহ বড় বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। আর সাতজন মানুষকে নিয়ে গিয়ে লোক দেখানো সাতটি প্যাকেট তুলে দিয়ে গেছেন। যেখানে বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে গেছে। তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা, কৃষি ফসল, গবাদিপশু ভেসে গেছে। তাদের জন্য তিনি কোনো কিছু দেননি। অথচ ত্রাণের জন্য মানুষ হাহাকার করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মাওয়ায় ৯০টি টয়লেট ৯ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করেছে। এ টাকা যদি সিলেটের বন্যার্তদের দেওয়া হতো তাহলে মানুষকে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন তারা মানুষের জন্য কোনো কাজ করবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০০৪ সালের বন্যায় খালেদা জিয়া মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে গেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতির জন্য বড় বড় প্রকল্প করে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য, জনগণের জন্য প্রজেক্ট করে না।
তিনি বলেন, শিয়ালের কাছে যেমন মুরগি বাগি দেওয়া যায় না, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নির্বাচনী ভার দেওয়া যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফেরাতে এ সরকারকে রুখে দেওয়ার জন্য, আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান তিনি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চলনায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আমরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আপনাদের কাছে এসেছি। আমরা জানি আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু দিতে পারবো না। তারপরও আমরা সাধ্যমতো নিয়ে এসেছি। এ সরকার জনগণের পাশে নেই, কারণ তারা বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে আছে। বিএনপি অতীতেও আপনাদের পাশে ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ইয়াসিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্তাজ আলী চেয়ারম্যান, দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম বাহার প্রমুখ।
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকালে সিলেটে পৌঁছে হযরত শাহ জালাল (র.) ও হযরত শাহ পরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে তিনি সিলেট জেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এনইউ/আরবি