নড়াইল: নড়াইলের দিঘলিয়ায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল নড়াইল-০১ আসনের সংসদ সদস্য কবীরুল হক মুক্তি, নড়াইল-০২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ জালাল মুকুল, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল মাহামুদসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
বুধবার (২০ জুলাই) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়িঘরে যান নেতারা। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর দুপুরে দিঘলিয়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরে স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন তারা। এখানে আহত স্কুলশিক্ষকসহ অন্যদের বক্তব্য শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এসময় নড়াইল-০২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বলেন, এখানে আমাদের দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এসেছেন। আমার যা বলার, তা আপনাদের সামনেই বলেছি। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সামনে শুধু এটুকুই বলতে চাই, যখন ঘটনা ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা উপস্থিত হতে পারিনি এটা সত্য, ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে যা ঘটেছে, তা আমাদের নেতৃবৃন্দ আপনারা সাক্ষী। আপনাদের সামনেই হয়েছে, কিন্তু আইন আমরা হাতে তুলে নিতে পারি না বলেই আমরা অনেক কিছু সে সময় করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন মন্দের মধ্যে ভালো জিনিসটা খোঁজা ছাড়া পেছনে তাকিয়ে কোনো লাভ নাই। আপনারা দেখেছেন, আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সবাই আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনায় আমরা আপনাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আছি, ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রশাসনের লোকেরা দায়ীদের চিহ্নিত করছেন, আপনারা নিশ্চিত থাকেন, এর বিচার হবেই। আপনারা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করেন, মা-বোনেরা যদি বাইরে থাকেন, তাদের বাড়িতে আনুন। আপনরা দেখেন, আমরা অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে আছি। আজ যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা হয়তো ঠিক করা যাবে, কিন্তু আমরা চাচ্ছি যেন আপনাদের যে মানসিক ক্ষতি হয়েছে, সেটা আপনারা কাটিয়ে উঠুন। আপনাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাক। আপনারা স্বাভাবিকভাবে বাজারসদাই করেন। এ শক্তি যোগাতেই সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ আমরা পাশে আছি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ভয়-আতঙ্ক দূর করতেই তাদের সবার পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এ জন্যই আমরা এসেছি। কারা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত যারা করে, তারা প্রকারান্তরে বাংলাদেশের ওপর আঘাত করে। এ শত্রুদের কোনো ক্ষমা নেই, তাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যারা লুটেরা, তারা মানুষ নয়, তারা দেশের শত্রু।
এদিকে সাহাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বাড়িতে ফিরেছেন। ভয় কাটতে শুরু করেছে তাদের। খুলতে শুরু করেছে দিঘলিয়া বাজারের দোকানপাটও। সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরা শুরু করছেন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা প্রতিদিন আসছেন। পুলিশ-র্যাব দিনরাত পাহারা দিচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার আসছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও আশপাশের সামাজিক নেতারা পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এতে নারী-পুরুষদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে।
মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) কটূক্তি করে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত সাহাপাড়ায় বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
এসআই