ঢাকা: জিয়াউর রহমান যদি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করতেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
সোমবার (১৫ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপি বলে জিয়া মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সে কি স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল? অবশ্যই তার কর্মকাণ্ডে সেটি প্রমাণ হয় না। যদি তিনি সত্যি মুক্তিযুদ্ধর পক্ষের শক্তি হতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করতেন না। জিয়া যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি খুনিদের বিচার কেন করেননি? তাদের বিচার করতে তার কী সমস্যা ছিল? তিনি উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছিলেন। তাদের রাষ্ট্রদূত বানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জিয়া ’৭৫ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যারা রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকারের প্রধান গোলাম আযমকে তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিলেন, যে ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে একটি হলো ৭ মার্চের ভাষণ। একজন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি কখনো এ কাজগুলো করতে পারে না।
হানিফ বলেন, বিএনপি জন্ম হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দিয়ে। তারা এখনো এ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাদের নেতারা সব সময় মিথ্যাচার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। তিনি হঠাৎ করে ১৫ আগস্ট কেক কাটা শুরু করলেন। এর কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী। গোটা জাতির শোকের ও বেদনার দিন এরা আনন্দ করে। কারণ বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছেন আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৫ আগস্ট আমাদের জীবনে শুধু ক্ষতের সৃষ্টি করেনি। এ দিন এলে আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, যে মানুষটা আমাদের বীরের জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো কারাগারে ও শাসকদের হাতে অত্যাচাচিত হয়ে কাটিয়েছেন, সেই মানুষকে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করতে পারে। এটি ছিল অকল্পনীয় একটি বিষয়, যা সাধারণ মানুষের চিন্তা ছিল না কিন্তু খুনিদের মধ্যে ছিল। তারা সেদিন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কতটা জঘন্য হলে তারা সেদিন ১০ বছরের ছোট্ট শেখ রাসেলকেও বাঁচতে দেয়নি। এটি ছিল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড।
বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ প্রফেসর এ কে এম সাইদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মহাসচিব কৃষিবিদ মো. খায়রুল আলম প্রিন্সের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব কৃষিবিদ এম. আমিনুল ইসলাম। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
এসকে/এমজেএফ