ঢাকা: কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ কখনো সহ্য করেনি বলে উল্লেখ করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ জন্য আওয়ামী লীগকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার (২২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের চিরায়ত মিথ্যাচারের রাজনীতি অব্যাহত রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা অন্তরে ১৫ আগস্টের নির্মম-নিষ্ঠুর পাশবিক মানসিকতা এবং ২১ আগস্টের বর্বরতা ও পৈচাশিকতাকে ধারণ করে। ঐতিহাসিকভাবেই বিএনপি স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং জঙ্গি-সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে লালন করে আসছে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মূল্যবোধের প্রতি দায় সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলে। বিএনপি গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কখনো হৃদয়ে ধারণ এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে তা চর্চা করে না। তারা কখনোই প্রথাসিদ্ধ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা পালন করেনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এদেশে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রধানতম পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে গণতন্ত্র, মানবিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে যে সকল সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হয়েছে বিএনপিই সে সকল সঙ্কটের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে। এই অপরাজনীতির কারণে বিএনপি যখন জনরোষের মুখে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন মনে করেছে— তখনই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দেশবিরোধী ষড়ন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি ক্ষমতায় থাকাকালীন জনরোষের মুখে তাদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যখন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তখন এই বৈশ্বিক সংকটকে পুঁজি করে জাতীয় রাজনীতিতে সংকট সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আর এই ষড়যন্ত্রের মূলে রয়েছে একুশে আগস্টের মাস্টারমাইন্ড খুনি তারেক রহমান ও তার দল বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তির উৎস হলো এদেশের জনগণ। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও গণস্বার্থকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই চরম দারিদ্র্য, মঙ্গা-খরা ও দুর্ভিক্ষ জর্জরিত অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তার নির্মম অভিঘাত থেকে মুক্ত হয়ে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় অদম্য আজকের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামী, মুক্তিকামী মানুষ ও রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পবিত্র সংবিধানে পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব— কারো সাথে বৈরিতা নয়’। শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এই নীতির যে কোনো বিকল্প নেই, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে পারস্পরিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সহযোগিতা-সহমর্মিতা মানবিক মূল্যবোধ, নীতি ও আদর্শের মেলবন্ধন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করি এবং বন্ধুত্বের গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো সহ্য করেনি, করবেও না। আওয়ামী লীগ সর্বদা সকল ধরনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধিতা করে আসছে এবং সেজন্য চরম মূল্যও দিতে হয়েছে এই সংগঠনকে। তারপরও আওয়ামী লীগ দেশের ভিতরে ও বাইরে কোনো শক্তির নিকট মুচলেকা দিয়ে পথ চলে না। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বিকশিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের অতন্দ্র প্রহরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০, আগস্ট ২২, ২০২২
এসকে/এমজেএফ