ঢাকা: গণপরিবহনের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানো হয়েছে। এর ফলে দূর-পাল্লার গণপরিবহনের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সায় নামল।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতেও পাঁচ পয়সা কমিয়ে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৪৫ পয়সা ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মহাগনরীতে মিনিবাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৩৫ পয়সা নেমেছে। বরাবরের মতো সিটিতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে বিআরটিএ।
বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে আয়োজিত বৈঠকে নতুন ভাড়ার এই ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী।
গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের বর্ধিত দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাস ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআরটিএ। এতে ৪০ পয়সা বাড়িয়ে দূরপাল্লার বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২ টাকা ২০ পয়সা। একইভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২ টাকা ৫০ পয়সা। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের পর বিআরটির প্রস্তাব অনুমোদন হলে দূরপাল্লার বাস ভাড়া হবে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া হবে ২ টাকা ৪৫ পয়সা।
সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আমাদের এই নতুন ভাড়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সড়কে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) থাকবে। অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতবার আমরা যেভাবে মোবাইল কোর্ট করেছি, এবারও তা সড়কে থাকবে। যদি কোথাও কোনো অনিয়ম হয় বা পাওয়া যায় তবে আমাদেরকে জানাবেন তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব।
‘কেউ যদি ভাড়া বেশিও নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ যোগ করেন সচিব।
ঢাকা মহানগরীতে যে সমস্ত বাস গ্যাসচালিত, কিন্তু পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা তেলের ভাড়াই নিচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে- এ বিষয়ে বিআরটিএ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, গ্যাসচালিত গাড়ির বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি। ঢাকা শহরে এর সংখ্যা খুব কম। অধিকাংশ গাড়ি গ্যাস থেকে ডিজেল এ ফিরে গেছে। ঢাকা শহরে মাত্র ৩১৮টি গাড়ি গ্যাসে চালিত। বর্তমানে এই সংখ্যা কমও হতে পারে।
সড়কে এখনো ওয়েবিল চালু রয়েছে, এটি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা? এ প্রশ্নে বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্যাহ বলেন, আমরা এই অনিয়মগুলো দূর করার জন্য ঢাকা শহরের ১২০টি প্রতিষ্ঠানের এমডি-চেয়ারম্যানদেরকে সঙ্গে নিয়ে এরই মধ্যে দু’বার বৈঠক করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ওয়েবিল থাকবে না। এরপর মালিকদের নিয়ে আবার বসতে হয়েছে। মালিকরা বলছে যে, ওয়েবেল বন্ধ করে দেওয়ার পর তাদের যা ইনকাম আসতো তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে। এতে তারা যাত্রীদের হিসাব পায় না। তাই এ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের ৯টি টিম বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মিলে কাজ করছে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় না হয়, সেজন্য আমরা ই-টিকেটিং সিস্টেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাউন্টারে একটি পজ মেশিন থাকবে, ওই পজ মেশিনের মাধ্যমেই যাত্রীরা টিকেট কেটে গাড়িতে উঠবেন। এজন্য আমরা একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য ঢাকার ৫টি সড়ককে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নেবো। সেখানে এই সিস্টেমের টিকেট বিক্রির পরীক্ষা করে দেখা হবে। আমরা যদি এই প্রজেক্টে সফলতা পাই তবে আশা করছি পুরো ঢাকা শহরেই গণপরিবহনে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হয়ে যাবে।
বৈঠক শেষ ই-টিকেটিং প্রজেক্টের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে একজন যাত্রীর কাছে যথেষ্ট প্রমাণ থাকবে। সে কত টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে উঠলেন। সেই সঙ্গে মালিকও জানতে পারবে যে, তার পরিবহনে কতজন যাত্রী উঠলো এবং কত টাকা ভাড়া পেলো।
তিনি বলেন, মালিক শ্রমিক এবং যাত্রীর মধ্যে কিছুটা গ্যাপ থেকে যায় এর জন্য নানা সমস্যা ও ভুল বোঝাবুঝি হয়৷ আমরা (বিআরটিএ) চাই, সবাইকে একসঙ্গে মিলেই উত্তরণের পথে আসতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২, আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এসজেএ/এসএ