ঢাকা: গায়েবানা জানাজার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার যুবদল কর্মী রাজা আহমেদ শাওনকে স্মরণ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বাদ জুমা রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শাওনের স্মরণে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে ভোলাতে নুরে আলম ও আবদুর রহিমের প্রাণ গেলো। গতকালও (০১ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জে আমাদের আরেক ভাই শাওনের প্রাণ গেলো, রক্ত ঝরলো বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। কোনো কর্মসূচি ছিলো সরকারের বিরুদ্ধে? সেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসচিতে সারাদেশে অসংখ্য জায়গায় একইভাবে সরকারের পুলিশ বাহিনী গুলি চালিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শাওন শাহাদাত বরণ করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শাওনের এই রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না, তার আত্মত্যাগ আমাদেরকে আরও শক্তিশালী করবে। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, আমরা দেশের সমগ্র জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করব ইনশাল্লাহ।
‘শাওনকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো। তার শোককে আমরা শক্তিতে রুপান্তিত করব এবং সমস্ত শক্তিকে একত্রীত করে আমরা ওদের পরাজিত করতে সক্ষম হবো। আসুন আমরা সবাই শাওনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি, আল্লাহ তা‘লা যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। ’ বলেন ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা সকালে তার বাসায় গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জে। তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি, তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছি। সে (শাওন) একটি ওয়েল্ডিং কারখানাতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতো এবং যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলো।
কি অমানবিক, কী হৃদয় বিদাড়ক যে শাওনের লাশটিকেও এই সরকার তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি। রাত ২টার সময়ে পুলিশ পাহারায় তার লাশ নিয়ে গিয়ে সেখানে দাফন করেছে। তার দলের নেতা-কর্মী, পরিবারের সদস্য ও তার বন্ধুদের কাউকে সেই জানাজায় অংশ নিতে দেয়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গুম-খুন-হত্যার মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তারা বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দল বিএনপিকে তারা নির্মূল করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি পালনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যুবদলের ফতুল্লা থানার নেতা রাজা আহমেদ শাওন নিহত হন।
শাওন হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, বাদ জুমা সারাদেশে গায়েবানা জানাজা এবং শনিবার প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জাতীয়তাবাদী যুবদল রোববার প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
নয়া পল্টনের গায়েবানা জানাজায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উ্ল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, খন্দকার আবু আশফাক, মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নবীনগর বাজারে রাজা আহমেদ শাওনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে সমবেদনা জানান এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের স্বান্তনা দেন। তিনি যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে শাওনের কবর জিয়ারত করেন।
এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শাওনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেন বিএনপি মহাসচিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২s, ২০২২
এমএইচ/এসএ