ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই রজিউন।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের নিজ বাসায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকারের হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। কিন্তু তাকে ১৯৯২ সালে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। তারপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। তিনি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে এর বিরোধিতা করেন শাহ্ মোয়াজ্জেম। পরে তিনি খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হোন। ১৯৭৮ সালে গঠন করেন ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল)। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে তিনি যোগদান করেন এরশাদের দলে। তিনি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এরশাদ শাসনামলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৬, ৮৮ সালে মুন্সিগঞ্জ -১ আসন থেকে এবং ৯১ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে জেলহত্যা মামলায় গ্রেফতার হন। পরে এই মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে প্রায় তিন বছর কারাবরণ করে মামলা থেকে খালাস পান। প্রয়াত এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিক জোট করলে তার প্রতিবাদে ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। বিএনপিতে যোগদান করলে তাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২১ বছর একই পদে বহাল ছিলেন তিনি। শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ১৯ বার কারাবরণ করে ২২ বছর জেল খেটেছেন।
তিনি এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তান সহ বহু আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
নামাজে জানাজা
মরহুম শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রথম নামাজে জানাযা বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, দ্বিতীয় নামাজে জানাযা বা’দ যোহর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ষ্টেডিয়াম এবং তৃতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা বা’দ এ’শা গুলশান আজাদ মসজিদে (সেন্ট্রাল মসজিদ) অনুষ্ঠিত হবে। পরে বনানী কবরস্থানে সহধর্মিনীর পাশে দাফন করার কথা রয়েছে।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে গুলশানের নিজ বাস ভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
এমএইচ/কেএআর