ঢাকা: ড. কামাল হোসেনকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে গণফোরামের একাংশ।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু এ কথা জানান।
তিনি বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর গণফো্রামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সর্বসম্মতিক্রমে ড. কামাল হোসেনকে দলের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মো. মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্যপদসহ দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে তাকে গণফোরামের সভাপতি ও মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ঘোষণা করে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে যে ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অগণতান্ত্রিক। আমরা কখনো ইচ্ছা করলে বা আমি অথবা আমার সাধারণ সম্পাদক বা কেন্দ্রীয় কমিটি আমরা বসে একটা কমিটি উপহার দিতে পারি না। এটার সম্পূর্ণ এখতিয়ার থাকে কাউন্সিলরদের কাছে।
কিন্তু কাউন্সিলরদের ইগনোর করে আমরা পর পর দুইটা, একটা রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কাউন্সিল হয়েছিল এক বছরের জন্য। পরবর্তী পর্যায়ে মোকাব্বির খানকে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আওম শফিকউল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে একটা কমিটি ঘোষণা করা হলো। আবার গত ১৭ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে ড. কামাল হোসেন নিজে সভাপতি হয়েছেন এবং মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এসব স্ববিরোধী ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্য্কলাপ। আমি বলছি একথা, করছি আরেকটা। দলের সিনিয়র নেতারা যখন এসব কাজ করেন সাধারণ কর্মীরা তখন হতাশ হয়, জনগণ হতাশ হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর যে বিচরণ হচ্ছে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত পড়ে শুনান প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক।
সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে দেখলাম যে, ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্কহীন, দল থেকে পদত্যাগকারী, বিভেদ সৃষ্টিকারী ও নিষ্ক্রিয় কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে গণফোরাম নাম দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ড. কামাল হোসেন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ষষ্ঠ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ও মো. মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তারা কেউই গণফোরামের নির্বাচিত কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে স্বঘোষিত একটি গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করেছেন। এমনকি তারা তথাকথিত নির্বাচন কমিশনের সাথেও প্রতারণা করেছেন।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরামের একাংশ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে মোস্তফা মহসিন মনটুকে সভাপতি ও সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৭ সদস্যের কমিটি করা হয়।
গণফোরাম কী জাতীয় পার্টির মতো বিভক্ত কিনা প্রশ্ন করা হলে মন্টু বলেন, গণফোরাম এক ও অভিন্ন। এই দলের জন্ম হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্টে। সাইফুদ্দিন মানিক, আমীরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, শাহজাহান সিরাজসহ অনেক জাতীয় নেতার সমন্বয়ে এই দল গঠিত হয়েছিল।
দলের একটা নীতি থাকে। দল আমরা ১০টা ভাগ করতে পারি। কিন্তু কর্মীভিত্তিক যে সংগঠন, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী সম্পৃক্ত যে দলের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে সেটাই আসল কমিটি হবে। এখন সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের কমিটি নয়। মাঠপর্যায়ের মানুষের কাছে যে গণফোরাম অঙ্গীকারবদ্ধ, আমরা গণফোরামের নীতি আদর্শ বাদ দিয়ে কোনো আপস করতে রাজি নই।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, আইয়ুব খান ফারুক, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল বারী হামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন ইয়াজদানী, কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাসির হোসেন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
এমএইচ/এএটি