ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কথা বেশি নাই, কথা একটাই—আমরা আর শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই না।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খিলাগাঁওয়ের তিলপাপাড়া জোড়পুকুর মাঠের পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে দলীয় কর্মী হত্যা, দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অধীন খিলাগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানা বিএনপি এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কথা বেশি নাই, কথা একটাই—আমরা কি আর শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই? যারা আমাদের স্বাধীনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিয়েছে, যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, যারা আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দিয়েছে, যারা কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছে, আমরা কি সেই সরকারকে আর দেখতে চাই।
তিনি বলেন, আজকে চাল-ডাল-তেলের দাম কমানোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি। শেখ হাসিনা কী বলেছিলেন? দশ টাকা কেজি চাল দেবে, দিয়েছে? কৃষকদের বলেছিলেন, বিনা পয়সার সার দেবে, সেই সার এখন কৃষকরা পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে। বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। সেই চাকরি কি আপনারা পেয়েছেন? বরং লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও হয় না, ওখানে আবার আওয়ামী লীগের একটা সিল লাগবে, তাই না?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকার আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সময় হচ্ছে কাজের। কথার আর সময় নেই। কাজ হচ্ছে একটাই— সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ এই সরকার, যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা একটা সুখী সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম এখানে গণতন্ত্র থাকবে, আমরা প্রতিবাদ করতে পারবো, কথা বলতে পারবো, সভা-সমাবেশ করতে পারবো। সাধারণ মানুষকে মোটা কাপড়, মোটা ভাত, মোটা চাল দিতে পারবো। এরা (বর্তমান সরকার) কী করেছে! একবার ’৭১ থেকে ’৭৫ এখন আবার এই সময়ে তারা আমাদের সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলের কথা বললে আমাকে বলা হয়— পাকিস্তানের দালাল। পাকিস্তান আমলে চালের যে দাম ছিল আজকে চালের দামের মধ্যে কত পার্থক্য হয়েছে। তখন মানুষের জীবন-যাত্রার মান কী ছিল, এখন কত হয়েছে? তখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এই কারণে যে, পাকিস্তান আমাদের শোষণ করছিল, পাকিস্তান আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লড়াই করে সেদিন বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আর এরা (সরকার) আমাদের আবার সেই অবস্থায় নিয়ে এসে ফেলেছে। আজকে মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করছে। টাকা পাচার করছে। বিদেশে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। আর আমাদের মানুষকে হত্যা করছে। বরকত উল্লাহ বুলু, তাবিথ আউয়াল, সেলিমা আপাকে হত্যার জন্য আঘাত করে, ভোলা-নারায়ণগঞ্জে নূরে আলম, আবদুর রহিম, শাওনকে হত্যা করে আন্দোলনকে দমন করে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের পরিষ্কার কথা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। যেসব বন্দিকে রাজনৈতিক কারণে আটক করে রেখেছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের মিথ্যা মামলা তুলে ফেলতে হবে। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করতে হবে। যার মধ্যে দিয়ে সংসদ গঠন হবে, সরকার গঠন হবে।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউনুস মৃধার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মোনায়েম মুন্না, গোলাম মাওলা শাহীন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে দলের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ