বগুড়া: বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলুর সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় যুবলীগ নেতাকর্মীদের পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখান ওই সংসদ সদস্য।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদের দোতলায় হলরুমে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা চলাকালে বাইরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বুধবার উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা ছিল। সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সংলগ্ন হলরুমে সভা শুরু হয়। সভা শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর বাইরে হট্টগোল শুরু হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নুসহ অনেকে বের হয়ে দেখেন এমপি বাবলু এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি চলছে। এমপি বাবলুর শ্যালক ও তার (ব্যক্তিগত সহকারী) পিএস রেজা বিভিন্ন প্রকল্প দেওয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিলেও দীর্ঘদিনে সেই প্রকল্প না দিয়ে তালবাহানা করায় ও সেই টাকা চাওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়৷ একপর্যায়ে দু’পক্ষেই উত্তেজনামূলক কথা চলে ও হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় উপজেলা যুবলীগ নেতা বাদশাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন এমপির লোকজন। সেটি ঠেকাতে গিয়ে শহিদুল নামে শ্রমিক লীগের একজন মাথায় আঘাত পান। হামলায় এমপির সহকারীর মাথায়ও লাঠির আঘাত লাগে।
এ ব্যাপারে এমপি বাবলু বলেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা। বুধবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় অংশ নিতে তিনি উপজেলা পরিষদে যান। তবে তিনি পৌঁছানোর আগেই সভা শুরু হয়ে যায়। তখন তিনি ইউএনও আসিফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কার্যালয়ের দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী রেজা এবং গাড়ি চালকসহ কয়েকজন তার সঙ্গে ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরসহ যুবলীগের ৪/৫ জন নেতা হঠাৎ করে ইউএনওর দরজার সামনে এসে তার ওপর হামলা করেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে থাকা লোকজন যখন আমাকে রক্ষার চেষ্টা চালায় তখন যুবলীগ নেতা বাদশা আলমগীর রড দিয়ে তার পিএসের মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা ফেটে যায়। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু এসে তাকে ধাক্কা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আহত সেলিম রেজাকে শজিমেক হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার একপর্যায়ে তিনি আত্মরক্ষার্থে লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছিলেন বলেও জানান।
শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, ‘আমার সঙ্গে এমপির কিছু হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এমপির পিএসের ঝামেলা ছিল সেটা নিয়ে একটা হট্টগোল হয়েছে। ’
তিনি বলেন, এমপি বাবলুর শ্যালক ও তার (ব্যক্তিগত সহকারী) পিএস রেজা বিভিন্ন প্রকল্প দেওয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। দীর্ঘদিনেও সেই প্রকল্প না দিয়ে তালবাহানা করছিলেন। বুধবার সকালে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দেওয়ার জন্য সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদে আসেন। এ সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রেজাকে পেয়ে যুবলীগ নেতারা টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে আমি থামানোর জন্য এগিয়ে যাই। এ সময় এমপি বাবলু তার ব্যক্তিগত পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে তাক করেন। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও পরিষদের লোকজন এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর জানান, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এমপি বাবলু তার পিএস মো. রেজার মাধ্যমে চার বছর আগে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে বাবলু এলাকায় আসেননি এবং প্রকল্পও দেননি।
তিনি বলেন, বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদে দেখার পর প্রকল্প না দেওয়ার কারণ জানতে চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু সেখানে এলে এমপি তার কোমরে থাকা রিভলবার বের করে গুলি করার হুমকি দেন। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে তিনি পিস্তল লুকিয়ে ফেলেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
কেইউএ/এএটি