ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচিত হয়েই বাড়ি ফিরলেন সেই ছাত্রনেতা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
নির্বাচিত হয়েই বাড়ি ফিরলেন সেই ছাত্রনেতা! খন্দকার আজিজ

যশোর: যশোরের কেশবপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর বাড়ি-ঘর ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করা সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা জেলা পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়েই বাড়ি ফিরেছেন।

জেলাব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজ নামের এই সাবেক ছাত্রনেতা।



যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় এমপি শাহীন চাকলাদারের নির্বাচনী এলাকায় আড়াই বছর ঘরবাড়ি ছেড়ে ‘নিরুদ্দেশ’ থাকার পরেও সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এই সাবেক ছাত্রনেতার বিজয়ের কারণেই এ আলোচনা।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের সহধর্মিনী ইসমাত আরা সাদেক নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় তাকে ঘিরে ছাত্রলীগের পক্ষে নেতৃত্বে আসে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল আজিজ।  

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই মন্ত্রীর বিপক্ষের বলয়ে থাকা নেতাকর্মীর সঙ্গে বিভিন্ন বিবাদে জড়িয়ে বার বার আলোচনায় থেকেছে খন্দকার আব্দুল আজিজের নাম, এমনকি সেসময় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী গণমাধ্যমেও আলোচনা-সমালোচনায় আসে আব্দুল আজিজ।

তবে, কোন কিছুতেই তিনি মন্ত্রীর পিছু ছাড়েনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসমাত আরা সাদেক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। তারপরও, খন্দকার আব্দুল আজিজ যুক্ত ছিলেন ইসমাত আরা সাদেকের বলয়ে। ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেক মৃত্যুবরণ করলে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় তার আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে নওরীন সাদেকের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন খন্দকার আব্দুল আজিজ। তবে, নওরীন সাদেকের পরিবর্তে এই আসনে মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।


ওই রাতেই তৎকালীন মন্ত্রীর প্রতিপক্ষরা শাহীন চাকলাদারের পক্ষে মিছিল বের করে, এমনকি আজিজের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। সেই রাতের আঁধারেই বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় আজিজ। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় অবস্থান করে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন, তবে বাড়ি-ঘরে আসতে পারেননি।

অবশেষে, সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ঢাকায় অবস্থান করেই সদস্য পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় সাবেক এই ছাত্রনেতা। এরপর, গোপনে যশোর ফিরে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং জমা দেন। এরপর, প্রতিপক্ষদের হামলা-সংঘাত এড়াতে কিছুটা গোপনে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন এবং এলাকায় উন্নয়ন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সাহসী ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।  

আজিজ অনুসারীদের দাবি, নির্বাচনে অন্য প্রার্থীরা শোডাউন থেকে শুরু করে অর্থের ছড়াছড়ি করলেও নানা সিমাবদ্ধতার কারণে আজিজের পক্ষে সেগুলো করা হয়নি। এমনকি, ভোটের মাঠে তার পক্ষে কোনো ক্যাম্প বসানো কিংবা সক্রিয়ভাবে মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হয়নি। তারপরেও, তিনি ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে খন্দকার আব্দুল আজিজের বিজয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গোটা কেশবপুরে তরুণ প্রজন্মের হাজারো নেতাকর্মী বিজয় মিছিল বের করেন। কর্মীদের পক্ষে সেখানে মিষ্টি বিতরণও করা হয়।

অন্যদিকে স্থানীয় এমপি তথা এমপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র কিছুটা অপ্রকাশ্যে সাঈদুল ইসলাম নামে একজনকে সমর্থন করেছিলেন, নানাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব তার পক্ষেই ছিল। তবে, তিনি ১৯ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।

সারাদেশে জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিতদের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলেও বিশেষ কারণেই কেশবপুরে খন্দকার আজিজের বিষয়টি ছিল নানা কারণেই আলোচিত, এমনকি জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগ নেতাদের দৃষ্টি ছিল আজিজের ফলাফলের দিকে৷ এমনকি, বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদার ঘিরে গড়ে ওঠা বলয়ের নেতাদের নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে নিস্ক্রিয় নেতাকর্মীরাও আজিজের বিজয়ে উল্লাসিত হয়েছেন।  

অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজিজকে অভিনন্দন জানিয়ে নানান স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।  

উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক জিএম হোসেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, কেশবপুরে নোংরা রাজনীতি পরিষ্কার করার জন্য খন্দকার আজিজকে দরকার।

যশোর জেলা পরিষদে সদস্য পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত খন্দকার আব্দুল আজিজ বলেন, রাজনীতি করলে পক্ষে-বিপক্ষে লোকজন থাকবে, তারা পক্ষে-বিপক্ষে বলবেন এটা স্বাভাবিক। তবে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও আমি নিজের দলের প্রতিপক্ষের কারণে বাড়িছাড়া, এটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যের। কোনো অন্যায় থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়ে বহুবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে গিয়েছি, তবে কিছু সুবিধাবাদীদের কারণে সুযোগ পাইনি। তারপরও, কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই! 

আমার নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতেই দূরে থেকেও কেশবপুরে ছাত্রসমাজ-তরুণ সমাজের একটা বিরাট অংশকে কোন সুবিধা না দিয়েও একত্রিত রাখতে পেরেছি, আজকের বিজয় মিছিলে তার বহিপ্রকাশ ঘটেছে। আমি সন্মানিত ভোটারদের কাছে চিরঋণী থাকবো, এই সুযোগকে আমি সততার সাথে কাজ করব। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীন দলের ত্যাগী ও প্রকৃত কর্মীরা যারা ‌‘নানা কারণে’ রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন তাদের পাশে থাকবো।  

এছাড়াও ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।