সিলেট: ফের সমালোচনার মুখে পড়লেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম লায়েক (এ কে লায়েক)। করোনাকালে সরকারি চাল আত্মসাতের পর এবার উত্তরাধিকারী সনদ থেকে বড় অংকের উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে।
উত্তরাধিকারী সনদ দিতে এক প্রবাসীর কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন লায়েক। পরে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে সনদ দেন তিনি। উৎকোচ নেওয়ার অডিও ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় নগরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অডিও ও ভিডিওতে সিএনজি অটোরিকশাচালক নান্নু নামে প্রবাসীর বাসার কেয়ার টেকারের সঙ্গে কাউন্সিলর লায়েককে কথা বলতে শোনা যায়।
চালক নান্নু মোবাইল ফোনে কাউন্সিলর লায়েককে সালাম দিয়ে বিকাশ নম্বরে টাকা দিতে চাইলে কাউন্সিলর নান্নুকে বলেন, তোমার বিকাশ নাম্বারে টাকা আনাও।
পরে আবার কল করে নান্নু নিশ্চিত করেন, টাকা তার কাছে এসেছে। কাগজ কোন সময় দেওয়া হবে তা জানতে চান তিনি। তখন কাউন্সিলর লায়েক বলেন, তুমি রাতে দেখা করিও, সকালে কাগজ নিয়ে যাবে। তুমি টাকা উঠিয়ে নিয়ে আসো, আমি করাইয়া দিমু।
এক পর্যায়ে চালক নান্নু বলেন, আমি ছাতক যাচ্ছি। সেখান থেকে ফিরে টাকা নিয়ে আসবো। তখন কাউন্সিলর বলেন, তোমাকে শহরের বাগবাড়ি দেখলাম হেঁটে যাচ্ছো। নান্নু বলেন, সেখান থেকে ফিরে আসবো, এইতো যাচ্ছি। পরের দিন যোগাযোগ করে আসবো ভাই।
নান্নু দুই ধাপে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা কাউন্সিলরকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
এক পর্যায়ে কাউন্সিলর লায়েক বলেন, আমার ভোটের দরকার নাই। ইতা আমরার কারবার নায়, ডিসি অফিস থেকে আনতে হয়। পুরা টাকা দিলে রাতেই নিতে পারবা।
তিনি আরও বলেন, তোমরা বুঝো না, আফতাবের (৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর) ওয়ার্ডেও টাকা লাগে।
এদিকে, কাউন্সিল লায়েকের অফিস সহকারী আরেকটি মোবাইলফোনে কল করে বলেন, আমি ডিসি অফিস থেকে বলছি। মৃত আব্দুর রশিদের উত্তরাধিকার সনদের জন্য আবেদন করেছেন। কাউন্সিলর অফিস থেকে টাকা দিয়ে নিয়ে যান, টাকা দিলে রাতেই নিতে পারবেন।
ভুক্তভোগী শাহিন আলম এহসান বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে উত্তরাধিকারী সনদ দিতে কাউন্সিলর লায়েক আগেও ভোগিয়েছেন। আগের সনদ ৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ায় ফের সনদ আনতে গেলে ডিসি অফিসের দোহাই দিয়ে তিনি খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা চান। পরে নিজে তার কার্যালয়ে যান। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বিভিন্ন তালবাহানা করেন। পরবর্তীতে কেয়ারটেকার নান্নুর মাধ্যমে গেলে ২০ হাজার টাকা দিয়ে উত্তরাধিকারী সনদ নেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর লামাবাজার ফাঁড়ির এক এএসআই প্রাণেশ ফোন দিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে জিডি হয়েছে মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়ে। পুলিশ সদস্য ঘটনাটি কাউন্সিলরের সঙ্গে শেষ করতে বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর উত্তরাধিকারী সনদের বিষয়ে কথোপকথন পরবর্তীতে টাকা নিয়ে উত্তরাধিকারী সনদ দেন কাউন্সিলর লায়েক। এরপর ১৭ অক্টোবর ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। শুক্রবার জুম্মার পর টনসিল অপারেশনের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। যদিও কাউন্সিলর লায়েক বলেছেন, এর আগে তিনি নাক কান গলার ডা. নুরুল হুদা নাইমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার জন্য যান।
এদিকে সিসিক সূত্র জানায়, উত্তরাধিকারী সনদ একজন নাগরিক বিনামূল্যে পেতে পারেন। কাউন্সিলররা কেবল যাচাই বাছাই করে দেবেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর লায়েক বাংলানিউজকে বলেন, কোনো উত্তরাধিকারী সনদের জন্য আমি টাকা নিইনি। আর এভাবে কি কেউ প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়? আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি গলায় অস্ত্রোপচার করেছেন দাবি করে বলেন, অভিযোগকারী সালমান তাকে ভিডিওক্লিপ পাঠিয়ে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন। যে কারণে তিনি জিডি করেছেন। আর সালমান ওই ওয়ার্ডের না, তাকে কেনো উত্তরাধিকারী সনদ দেবো- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল কাউন্সিলর লায়েকের বাসা থেকে ১২৫ বস্তা সরকারি ত্রানের চাল উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন কাউন্সিলর লায়েক। এ ঘটনার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ বিবৃতি দিয়ে বলে লায়েক স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেউ নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এনইউ/এসএ