নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মঞ্চে বরণ করে নেওয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসার তারিখ ঘোষণা করে আলোচনায় এসেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কিছু না জানলেও কিংবা তাদের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না থাকলেও নিজে থেকেই রূপক অর্থে এ মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার এ মন্তব্যের ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে অনেকে।
এদিকে তার এ মন্তব্যের কারণ কিংবা আসলেই দলীয় এরকম কোনো বার্তা আছে কিনা জানতে মামুন মাহমুদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এসময় তিনি জানান, মূলত নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এটি ছিল প্রতীকী মন্তব্য। তবে তিনি এও বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে মঞ্চে নিয়ে আসবে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।
মামুন মাহমুদ জানান, ঢাকার একটা সমাবেশে আমাদের আমান উল্লাহ আমান ভাই বলেছিলেন, ১০ তারিখের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। সেটাকেই আমরা ফলো করেছি। মূলত এই বক্তব্যকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রণচাঞ্চল্য ফিরে আসে আর তাই আমরা সেটাকেই বলেছি। সকল বিভাগে আমাদের সমাবেশগুলোতে হাজারো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে জনগণের স্রোত আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই ধারণা থেকে আমি বলেছি, যেহেতু এসব সমাবেশ সরকার এত চেষ্টা করেও ব্যর্থ করতে পারে নাই, সবগুলো সমাবেশ সফল হয়েছে। সবশেষে যখন ঢাকার সমাবেশ হবে সেদিন তো ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে মানুষ আসবে। অন্যান্য বিভাগ থেকেও মানুষ হয়তো প্রতিবাদ জানাতে আসবে। সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকবে না। সেদিন হয়তো দেখা যাবে লজ্জায় সরকার পদত্যাগ করবে।
তিনি বলেন, সবগুলো সমাবেশের পর যখন ঢাকা বিভাগের সমাবেশ হবে সেই সমাবেশের স্রোতেই এই সরকারের পদত্যাগ হবে। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার যদি পদত্যাগে বাধ্য হয় সেক্ষেত্রে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে এবং সেই সরকারের সময় অবশ্যই আমাদের নেতা তারেক রহমান ফিরে আসবে এবং দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
সরকারের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছু নেই মন্তব করে তিনি বলেন, ১০ তারিখে যদি সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি ১১ তারিখ তারেক রহমান ফিরে আসবেন। সরকারকে তো পদত্যাগ করতে আমরা আহবান জানাচ্ছি। এখন সরকার পদত্যাগ করবে কিনা সেটা সরকার সিদ্ধান্ত দেবে তবে পরিস্থিতি হবে সরকারের পদত্যাগের মতই। সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে কারণ এখন আর কোন কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সব সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সরকার মানুষের চাওয়ার বিপরীতটা করছে দাবি করে তিনি বলেন, খুলনায় সমাবেশে সকল যান চলাচল বন্ধ ছিল, তাই বলে কি জনস্রোত থামানো গেছে? যায় নাই। জনগণকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নেই, কারণ এখন জনগণের অনাস্থা তাদের প্রতি। সরকার যা চায় মানুষ তার বিপরীতটা চায়।
দলীয় কোনো বার্তা বা নির্দেশনা নেই জানিয়ে এই মন্তব্য একান্ত নিজের দাবি করে তিনি বলেন, দলীয় এরকম কোনো নির্দেশনা নেই, এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। রূপক অর্থে আমি বলেছি। আমরা তো রূপক অর্থে সমাবেশগুলোতে তার জন্য একটা চেয়ার খালি রাখি। সেটাই আমি বলেছি।
বিভাগীয় সমাবেশের দিন অর্ধকোটি লোকের সমাগম শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকেই অন্তত ৫০ হাজার লোক যাবে। যদি খুলনার মত পরিস্থিতি হয় তবে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ তো খুব বেশি দূরে নয়, আর ঢাকায় প্রবেশে অনেকগুলো পথ আমাদের আছে, এসব পথে আমরা সুবিধাজনকভাবে হেঁটে চলে যাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সারা দেশে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা দায়ের, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, আপনারা সকলে রজনীগন্ধা হাতে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত হবেন। আমরা রজনীগন্ধা দিয়ে আমাদের নেত্রীকে ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) মঞ্চে বরণ করে নেব। যদি গাড়ি বন্ধ করা হয় তাহলে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী পায়ে হেঁটে ঢাকা রওয়ানা হবে।
তিনি বলেন, ১০ তারিখের জনসভার পরের দিন থেকে এ দেশ তারেক রহমানের নির্দেশে চলবে। তারেক রহমান আবারও দেশে ফিরে আসবে। ঐ বিমানবন্দরের নাম আবারও জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হবে। তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েই আমরা রাজপথ ছাড়বো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এমআরপি/এজে