ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১২
কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ

ঢাকা : জনবল-সাব স্টেশন সংকট, পুরোনো প্রযুক্তি ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় নানা ত্রুটির কারণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না। উপরন্তু সম্প্রতি সরকার আরইবি’র গ্রাহক ও বিতরণ লাইন ব্যাপক হারে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।



এতে সংস্থাটির সেবার মান আরো নিচে নেমে যাবার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সংস্থাটির দাবি, অবকাঠামো উন্নয়নে নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তারপরও পরিস্থিতির কতোটা পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবি’র একজন কর্মকর্তা জানান, আরইবি’র (৪৩৩টি) সাবস্টেশনগুলো অনেক পুরোনো। এর সংখ্যাও অনেক কম। ত্রুটিযুক্ত সাবস্টেশন এবং সঞ্চালন লাইনের কারণে ওভারলোডজনিত সমস্যা ঘটে। এ কারণেও কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এতো সমস্যা থাকার পরেও সরকার আবারো নতুন করে গ্রাহক ও বিতরণ লাইন ব্যাপক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যেই তারা এজন্য বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে ১০ লাখ গ্রাহক প্রকল্প। এছাড়া নেওয়া হয়েছে ৫বছর মেয়াদী ১.৮ মিলিয়ন (আঠার লাখ) গ্রাহক প্রকল্প।

এ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ কেভি লাইন ২ হাজার কিলোমিটার, আপগ্রেডেশন লাইন ৫০০ কিলোমিটার, সঞ্চালন লাইন ৪৫ হাজার কিলোমিটার ও ১০০ সাব স্টেশন নির্মাণ ও ৫০টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে  জানা গেছে।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। নতুন এ সংযোগের জন্য অতিরিক্ত ৭৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে। তবে একে যথেষ্ট মনে করছে না সংশ্লিষ্টরা।

আরইবি’র ১.৮ মিলিয়ন গ্রাহক প্রকল্পের পরিচালক নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, সেবার মান কমে যাবে, এমন প্রকল্প সরকার নেওয়ার কথা নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেবার মান কমল না বাড়ল তা আমার দেখার বিষয় নয়। ’

আরইবি’র একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আরইবি’র  জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ১৯৭৮ সালে সেবার লক্ষ্য নিয়েই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি করা হয়। এরপর প্রতি বছরেই গ্রাহক ও আয়তন বেড়েছে কিন্তু সে হারে জনবল বাড়েনি। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবার লক্ষ্য পূরণ না হয়ে দিন দিন এর মান কমছে।

জনবলের অভাবেই অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটলে মেরামত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেবার মান কমে যেতে পারে। বর্তমান অবস্থায়ই আরইবি তাদের গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছে না। আরো নতুন গ্রাহক বাড়ালে অবস্থা আরো খারাপ হবে বলেও মন্তব্য করেন আরইবি’র এক কর্মকর্তা।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জাতীয় গ্রিড থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনটি ফোর নট তার দিয়ে করা।

ওই লাইন দিয়ে সর্বোচ্চ ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু তাদের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩১ মেগাওয়াট। ১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ নিলেও তাদের সিস্টেম লস ৩৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

এ কারণে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ থাকলেও তারা ৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। এই লাইনের মেরামত ছাড়া যদি নতুন গ্রাহক করা হয়, তাহলে ভোগান্তিই শুধু বাড়বে।

ওই লাইনের তার পরিবর্তন করে ৪৭৭ এমসিএম তার লাগলো হলে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানায় সূত্রটি।

এই চিত্র শুধু মেহেরপুরেরই নয়। কম বেশি সব সমিতিতেই এ সমস্যা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আরইবি’র পরিচালক (সিস্টেম অপরেশন) গোলাম মোস্তফা জানান, আরইবি জাইকার অর্থায়নে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সংস্থাটি আধুনিক সাবস্টেশন স্থাপন করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সিস্টেম আপগ্রেডেশনের জন্যও আরইবি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

আরইবি সূত্রে আরো জানা গেছে, আরইবি’র অবকাঠামো সংস্কারের অংশ হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জে ১৮ হাজার ২০০ কিলোমিটার লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

এ বছরে ৭ হাজার কিলোমিটার লাইন সম্প্রসারণ করা হবে। গোপালগঞ্জের ২৩০ কিলোমিটার লাইনের কাজ জুনের মধ্যে শেষ হবে।  


বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে ২২ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেবার মান বাড়াতেও অনেক কাজ করছে। সরকার অনেক ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে, যার সুফল খুব শিগগিরই জনগণ পেতে শুরু করবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দেশে আরইবি’র অধীনে ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ২ হাজার ৯৩৬ মেগাওয়াট। গ্রাহক রয়েছেন ৯০ লাখ ৩২  হাজার ৫৯২ জন এবং বিতরণ লাইন রয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার কিলোমিটার।

বাংলাদেশ সময় : ২১৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।