ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘আগামী সেচ মৌসুমের আগেই বিদ্যুৎ আমদানি’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১২

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে: আগামী সেচ মৌসুমের আগেই ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় সরকার। আর সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে ১০৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন ও একটি সাব স্টেশন নির্মাণের কাজ।



বিদ্যুৎ সচিব দাবি করেছেন, প্রকল্পের ৪৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক দাবি করেছেন, এখন পযর্ন্ত কাজ হয়েছে ৩০ শতাংশ।

আগামী বছরের জুলাই মাসে এই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ আনার সময় নির্ধারণ রয়েছে। তবে ৩ মাস এগিয়ে এনে সেচ মৌসুম ধরতে প্রকল্পের মেয়াদ ৩ মাস কমিয়ে আনার লক্ষ্যে শুক্রবার বৈঠক করা হয়েছে বলে জানান বিদ্যুৎ সচিব।

বিদ্যুৎ সচিব দাবি করেছেন, ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের সঞ্চালন খরচসহ প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে ৪ টাকার মতো। তবে এ দাম সময় সময়ে পরিবতর্ন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, ভারত সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার চুক্তি হয়েছে। আরো ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে আনা হবে।

বেসরকারি কোম্পানির থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যথাসময়ে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে বলেও জানান বিদ্যুৎ সচিব।

শুক্রবার কুষ্টিয়ার ভোড়ামারায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য নির্মাণাধীন আন্ত:দেশীয় গ্রিড উপ কেন্দ্র পরির্দশনের সময় সাংবাদিকদের একথা বলেন বিদ্যুৎ সচিব।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি) আমদানি চুক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।

এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সঙ্গে চুক্তি করে।


ভারত থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকার মধ্যে থাকবে বলেও জানান তিনি।

ভেড়ামারার গোলাপনগরে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন ১১৩ একর জমির ওপর আন্ত:দেশীয় গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা।

আন্ত:দেশীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটির পরিচালক কাজী ইশতিয়াক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ অংশে ২৭ কিলোমিটারে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ৭৮টি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৬১টির ভিত্তি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ১৭টির কাজ চলছে।

ভারতের ৭৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব।

আন্ত:দেশীয় সঞ্চালন লাইন (৪০০ কেভি)ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রিড লাইন নির্মাণ হলে এ সঞালন লাইন দিয়ে ১০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ আনা যাবে। এ জন্য আরো একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, আরো একটি সাব স্টেশন নির্মাণ করার জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। আন্ত:দেশীয় গ্রিডটি দেশের জন্য বিশাল সম্ভবনার দ্বার খুলে দেবে বলেও তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, এ গ্রিডটি দিয়ে পরবর্তীতে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
 
এ সঞ্চালন লাইনে দিয়ে পরবর্তীতে আরো বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, এ লাইনের মাধ্যমে শুধু এই ৫০০ মেগাওয়াটই নয়। পরবর্তীতে নেপাল ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক গ্রিড লাইন হিসেবে এ লাইন ব্যবহৃত হতে পারে।

সরকারের হিসেবে, দেশে বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা প্রায় সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট হলেও ‘ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট’র মাধ্যমে তা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটে সীমিত রাখা হয়েছে।


বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি ও বেসরকারি খাতে ৫৬ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৯টি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চুক্তি করা আরো ১৯টি কেন্দ্রও বর্তমান সরকারের সময় উৎপাদনে এসেছে।

পিডিবি’র হিসেবে বর্তমান সরকারের সময় নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।