ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ফেঁসে যাচ্ছেন ডেসকোর দুর্নীতিবাজরা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
ফেঁসে যাচ্ছেন ডেসকোর দুর্নীতিবাজরা

ঢাকা: সংসদীয় কমিটির তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন ডেসকোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। নিয়োগের ব্যাপারে তাদের ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি।



বাংলানউজকে তিনি জানান, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) নিয়োগ পেতে একজন আবেদন করেছেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উপ-ব্যবস্থাপক পদে। নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরি বিধি, মেধা, নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানা হয়নি।

তিনি বলেন “অনিয়মের অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই শাস্তিমুলক ব্যবস্থা ও দুর্নীতির ফাইল দুদকে পাঠানোরে ‍সুপারিশ দেওয়া হবে। ”

কি ধরনের শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে ইসরাফিল আলম এমপি বাংলানিউজকে বলেন, “বিদ্যু‍ৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লি.(বিজিএফসিএল) ও কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বরখাস্ত করার ফাইল দুদকে পাঠানো হয়েছে। ”

তিনি জানান, এরই মধ্যে বিজিএফসিএল’র এমডি ও ডিজিএমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্ণফুলির এমডিকে বরখাস্ত করার সুপারিশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির যদি কোন তালিকা করা হয় তাহলে ডেসকো হবে এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানি।

সূত্রটি জানায়, ডেসকোর এক বোর্ড সদস্যের শ্যালক সাদেক মো. টিপুকে নিয়োগ দেওয়া হয় চাকরির বিধি ভঙ্গ করে।

কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই সাদেক মো: টিপুকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। তার বেতন নির্ধারণ করা হয় ৫৬ হাজার টাকা।

ওই পদে নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছর থাকলেও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় ৪১ বছর বয়সে।

চাকরি নেওয়ার জন্য গ্রামীণ ফোনের ম্যানেজার এইচআইডি পদে চাকরির ভূয়া অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেন তিনি। অভিজ্ঞতার সনদটি ভূয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে সংসদীয় কমিটির তদন্তে।

কমিটি গ্রামীণ ফোনের কাছে জানতে চাইলে গ্রামীণ ফোন জানায়, তাদের এ ধরনের কোন পদই ছিল না ওই সময়ে। এছাড়া সাদেক মো. টিপু কখনও তাদের কোম্পানিতে চাকরি করেন নি।

ইসরাফিল জানান, এ ধরনের অসংখ্য অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংসদীয় কমিটি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ মে দুর্নীতি তদন্তের জন্য ৬ নম্বর সাব কমিটি করা হয়। এতে আহবায়ক করা হয় ওমর ফারুক চৌধুরীকে। সদস্য করা হয় ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ইসরাফিল আলম এমপিকে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি বাংলানিউজকে বলেন, “প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় ওমর ফারুক চৌধুরী আর আহ্বায়ক থাকতে পারবেন না। তার স্থানে নতুন কাউকে আহ্বায়ক করা হবে। ”

শিগগিরই নতুন আহ্বায়ক চুড়ান্ত করে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলেও জানান সুবিদ আলী ভুঁইয়া।

নিয়োগে অনিয়মের পরপরই ডেসকোর অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানান ইসরাফিল আলম এমপি।

তিনি আরো জানান, রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে কিছু ভবন নির্মিত হয়েছে। এসব ভবনে বিদ্যু‍ৎ সংযোগ দেওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও ভুয়া ছাড়পত্র দিয়ে সংযোগ দেওয়া হবে বলে অভিযোগ পেয়েছেন তারা।

সিন্ডিকেট রাজউকের নিষেধাজ্ঞা থাকা ভবন মালিকদের সঙ্গে গোপন রফা করে। পরে তারা নিজেরাই ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি করে সংযোগ দেয়। এ বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখবেন। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ডেসকোর উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মহিউদ্দীন চক্র অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি ও সংযোগ দেওয়া সিন্ডিকেটে যুক্ত রয়েছেন- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসের ২ তারিখে বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
ইএস/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।