ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহে দুর্ভোগে চট্টগ্রামবাসী

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর ও স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৩
চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহে দুর্ভোগে চট্টগ্রামবাসী

চট্টগ্রাম: চাহিদার তুলনায় চট্টগ্রামে মাত্র অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।

 সে কারণে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।



কেজিডিসিএলের প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০১ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রতিদিন সরবরাহ করা হয় মাত্র ২০০ থেকে ২০৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

এ কারণে বিভিন্ন সার-বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং শিল্প এলাকায় পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।

পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এ রেশনিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। সে কারণে রমজানের সময়টায় লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এ জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে সার উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ধান চাষের সময় মূলত এসব কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

এদিকে, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্প মালিকরা। অন্যদিকে, দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আবাসিক গ্রাহকদেরও।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। আগের চেয়ে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাড়তি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু, চট্টগ্রামে এখনো আগের মতোই চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহের অভাবে বিভিন্ন শিল্প কারখানা রুগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে। ’

জানা গেছে চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট এবং গ্যাস চাহিদা ও সরবরাহের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিকে গত ২৩ জুলাই চিঠি দিয়েছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) সহিদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয়। এ কারণে রেশনিং পদ্ধতিতে গ্যাস সরবরাহ করে আপাত এ সংকট নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’

৫ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু, সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ঘনফুট।

জানা যায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় মাত্র ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এছাড়াও গ্যাসের অভাবে সিইউএফএল, কাফকো ও শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এর মধ্যে সিইউএফএল ও কাফকোতে দৈনিক চাহিদা যথাক্রমে ৫০ ও ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা ১২ মিলিয়ন ঘনফুট।

জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রায় তিন লাখ ৬৬ হাজার গ্রাহকের গ্যাস চাহিদা রয়েছে ৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। দুই হাজার ৭৮৬ বাণিজ্যিক সংযোগের বিপরীতে চাহিদা রয়েছে চার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এক হাজার ৩৮টি শিল্প সংযোগে চাহিদা রয়েছে ৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর ১৬৯টি ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে গ্যাসের চাহিদা ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামের ৬৩টি সিএনজি স্টেশনে চাহিদা রয়েছে ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।

জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গ্যাস দিয়েই চট্টগ্রামের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা হয়। এ খাত থেকে দৈনিক ১৯০ থেকে ১৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পায় কেজিডিসিএল। খাগড়াছড়ির সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায় সাত মিলিয়ন এবং সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায় তিন দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

সব মিলিয়ে গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামের শিল্প-বাণিজ্য খাত ও সাধারণ আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে!

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৩
টিসি/সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।