ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছে ৫ চিনিকল!

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪
বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছে ৫ চিনিকল!

ঢাকা: ধাপে ধাপে দেশের পাঁচ চিনিকলে থাকছে না আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পেলে কারখানাগুলোর উৎপাদনে থাকবে না সমস্যা।

চিনি উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা মাথায় রেখে সরকার কারখানাগুলোতে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন করতে যাচ্ছে।

চিনিকলগুলো হলো- নাটোরের নর্থবেঙ্গল, রাজশাহী, জয়পুরহাট, মোবারকগঞ্জ ও শ্যামপুর চিনিকল।

ফলে এখন থেকে চিনিকলগুলো সারাবছর চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাণিজ্যিকভিত্তিতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। তাছাড়া দেশে চিনির ঘাটতি আংশিক পূরণের মাধ্যমে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণপূর্বক জনস্বার্থ সংরক্ষণে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষায় সুপারিশকৃত ৫টি চিনি কলের মধ্যে এরইমধ্যে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় অবস্থিত নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুত উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন করা হয়েছে।

নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ৪০ হাজার মেট্রিকটন সাদা চিনি উৎপাদন করা হবে। । ফলে চিনিকলে আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট থাকবে না। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে নিজস্ব প্রয়োজনে কারখানাগুলো ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। বাকি ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে।

সরকার এ প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘প্রডাকশন অব ইলেক্ট্রিসিটি বাই কো-জেনারেশন অ্যান্ড ইস্ট্যাবেলিস্টমেন্ট অব সুগার রিফাইনারি অ্যাট নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস’। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটি (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)।

পরিকল্পনা কমিশনের মতে, দেশে সরকারি খাতের মোট ১৫টি চিনিকলে বছরে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। আখের অভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ১ লাখ মেট্রিকটনের কম চিনি উৎপাদন হচ্ছে। চিনি কলগুলো উৎপাদনের সময়ে নিজস্ব বয়লারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে।

তবে চিনি উৎপাদন শুধু মৌসুমকালীন ৩-৪ মাস সীমাবদ্ধ থাকায় বছরের অবশিষ্ট সময় চিনিকলগুলো বন্ধ থাকে। দেশের বর্তমান তীব্র বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিদ্যুতের বিভিন্ন বিকল্প উৎস সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দেয়।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী চিনিকলগুলোতে অমৌসুমে চিনি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে চিনিকলগুলোয় সারাবছর বিদ্যুৎ ও অমৌসুমে রিফাইন্ড সুগার উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বুয়েটের সমীক্ষায় সুপারিশকৃত ৫টি চিনিকলের মধ্যে প্রথমে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রকল্পটি সফল  হলে পরবর্তীতে অন্য চিনিকলগুলোতে এ পদ্ধতি স্থাপন করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশে বিদুৎ উৎপাদন ও চিনি উৎপাদন দু’টোই বৃদ্ধি পাবে। ফলে চিনিকলগুলো অতিরিক্ত আয়ের পাশাপাশি দেশের চিনির চাহিদাও মেটাবে। তখন চিনিকলগুলোর বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন।

প্রকল্পের আওতায় ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানি ও ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার স্থানীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে। এছাড়া ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা দিয়ে ফ্যাক্টরি বিল্ডিং এবং ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়ে কোল সেড ও চিনির গুদামও নির্মাণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।