ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিশেষ আইনে এলএনজি টার্মিনাল

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
বিশেষ আইনে এলএনজি টার্মিনাল

ঢাকা: বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় সরকার। দ্রুতগতিতে নির্মাণের জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।


 
সোমবার দুপুরে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত দরপত্রে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অপেক্ষাকৃত ভালো বিবেচিত হয়েছে জ্বালানি বিভাগের কাছে। আমরা ওই কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজটি করতে চাই।
 
দরপত্রে ছিল না এমন অনেক বিষয়ে আলোচনায় এসেছে। সে সব বিষয়ে আলোচনার জন্য কোম্পানিটির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
নসরুল হামিদ জানান, টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় গেলে অনেক বিলম্ব হতে পারে। তাই বিশেষ আইনের আওতায় আলোচনার মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্ভাব্য ওই কোম্পানিটি বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। এলএনজি থেকে গ্যাসে রূপান্তরের জন্য প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ (তাপের একক-বৃটিশ থার্ম‍াল ইউনিট) দশমিক ৩৯ সেন্ট হুইলিং চার্জ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতি বছর এই দর পুনঃনির্ধারণ করা যাবে।
 
তিনি জানান, সরবরাহ বন্ধ থাকার সময়ের জন্যও চার্জ প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটি। তারা ছয় মাসের মধ্যে সমীক্ষা করবে। সমীক্ষাকালের জন্য দুই মিলিয়ন ডলার জামানত দেবে। তারপর যদি তারা কাজটি করে তাহলে ১৮ মাস সময় লাগবে।

কোম্পানিটির প্রস্তাবের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হবে। আগামী ৮ মে আবার বসা হবে। সেখানে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
নাম উল্লেখ না করে নসরুল হামিদ বলেন, যাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে সে কোম্পানিটি বিশ্বের খ্যাতনামা কোম্পানি এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএস অ্যাস্ট্রা ওয়লে অ্যান্ড এক্সিলারেট এনার্জি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, জ্বালানির জন্য একটি সোর্সের ওপর নির্ভর করা কঠিন। তাই সরকার একাধিক বিকল্প দেখছে।

দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দামের বিষয়টি নির্ভর করবে কোথা থেকে কত কম দামে আনা হবে। আর সে বিষয়টি নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ। কোম্পানিটি শুধু টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে।
 
প্রাথমিকভাবে কাতার থেকে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ৩-৪ ডলার পড়তে পারে। কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি মার্কেটে আসবে। তখন দাম কমে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
 
নসরুল হামিদ বলেন, কাতার থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আনা যায় কি-না সে বিষয়েও ভাবছে বাংলাদেশ।
 
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের পাশাপাশি কয়লা এবং এলএনজিকে প্রাধান্য দিতে চাইছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন বড় গ্যাসক্ষত্র না পেলে ২০২০ সালের পর গ্যাস সঙ্কট দেখা দেবে। ভবিষ্যতে দেশ যেন জ্বালানি সঙ্কটে না পড়ে এ জন্যই বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার করা হবে।
 
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে এলএনজি টার্মিনালের জন্য আগ্রহপত্র (ইওআই) চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে ১০টি আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র জমা দেয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে আগ্রহী ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে চারটিকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। কোম্পানি চারটি হলো-ভারতের হিরানান্দিয়ানী, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস অ্যাস্ট্রা ওয়লে অ্যান্ড এক্সিলারেট এনার্জি, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের সিএন্ডটি করপোরেশন ও গোলার এলএনজি এনার্জি।
 
কোম্পানি চারটির কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হয়। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোবাংলা যে সময় বেঁধে দিয়েছে সে সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
 
কিন্তু পেট্রোবাংলা সেই সময় বাড়ানোর পক্ষে সায় না দিলে বিষয়টি ঝুলে যায়। মূল পরিকল্পনায় ছিল ২০১২ সালের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে। পরর্বতীতে তা বৃদ্ধি করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর করা হয়।
 
এলএনজি গ্যাস রূপান্তর করে চট্টগ্রামে আনার জন্য ৯১ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। গ্যাস ট্রান্সমশিন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত সরবরাহ লাইন স্থাপন করবে। পাইপ সরবরাহের জন্য ভারতীয় মান কোম্পানির তিন কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ ডলার দরপ্রস্তাব প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে।
 
টার্মিনালের কাজ শুরু হলেই পাইপ লাইনেরও কাজ শুরু করা হবে। বিগত মহাজোট সরকারের আমলে এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করে। ওই সময় কাতার দৈনিক ৫০০ মলিয়িন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করতে সম্মত হয়।

গ্যাসের তুলনায় দাম বেশি পড়বে। তবে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে এলএনজি অনেক সাশ্রয়ী। ফার্নেস অয়েলের পরিবর্তে এলএনজি আমদানি করা লাভজনক বলে মনে করছে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।