ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কয়লা মাটির নিচে রেখে লাভ নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৪
কয়লা মাটির নিচে রেখে লাভ নেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

ঢাকা: কয়লা মাটির নিচে রেখে লাভ নেই। আগামী দিনে কীভাবে ব্যবহার করবো, তার জন্য এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।



সিদ্ধান্তহীনতা সঠিক লিডারশিপ প্রমাণ করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বার বার বলছেন, কয়লা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে দেওয়া হবে, ঠিক সে সময়ে প্রতিমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন।

শনিবার দুপুরে পেট্রো সেন্টারে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
 
প্রতিমন্ত্রী নসরুল বলেন, আমাদের অনেক সম্পদ রয়েছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা কোনটাকে প্রাধান্য দেবো, এখনই সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।
 
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলে কতকাল ভর্তুকি দিয়ে যাবো। এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য শোধনাগার বাড়ানো উচিত।
 
‘অবুঝ নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘসময় বাংলাদেশ চলছে’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯০ দশকে সাবমেরিন ক্যাবলে ফ্রি সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা তা না করায় বাংলাদেশকে মাশুল দিতে হয়েছে।
 
তিনি বলেন, শুধু র‌্যালি নয়, হিউম্যান রিসোর্সগুলো উন্নয়ন করতে হবে। আমরা বাপেক্সকে আন্তর্জাতিকমানের কোম্পানিতে পরিণত করতে চাই। বাপেক্সের আর্থিক পার্টও আন্তর্জাতিকমানে উন্নত করতে হবে। এখানেও আমাদের নজর দেওয়া দরকার।
 
প্রতিদিন আট থেকে ১০টি বিদেশি টিম বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পরিবেশ কিছুদিন আগে ছিল না।
 
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা কমবে। অনেক বছর ধরে অনুরোধ করা হচ্ছে। এখন সময় এসেছে, আইনের মাধ্যমে সময় বেঁধে দিয়ে বাধ্য করার।
 
তিনি বলেন, তারা যদি নির্ধারিত সময়ে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন, তাহলে তাদের জ্বালানি দেবো না।

এমন বিধান করার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)  দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
 
স্বাগত বক্তব্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী নেতা ছিলেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমেই জ্বালানিখাতকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সে কারণে আজও অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
 
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন হিমালয় পর্বত। তার সঙ্গে উই ঢিবির সমতূল্য একজন সৈনিককে তুলনা করা হয়।
 
তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে দৈনিক ছয়শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিবিয়ানা, শাহবাজপুর ও বেগমগঞ্জ থেকে আরও সাতশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনে প্রস্তুত রয়েছে। কিছু টেকনিক্যাল কারণে এসব ফিল্ড থেকে বাড়তি গ্যাস তোলা যাচ্ছে না। তারপরও অনেকে সরকারের সাফল্য দেখতে পান না।
 
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সাশ্রয়ী নয়। তাই, ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাস সরবরাহ না দিয়ে সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা উচিত। তাতে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।
 
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার তরল জ্বালানি (জ্বালানি তেল) আমদানি করা হচ্ছে। পুরোটাই বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হচ্ছে।
 
জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু বক্বর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এআর খান প্রমুখ।
 
 
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট নামমাত্র মূল্যে বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েল'র হাত থেকে তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের মানিকানা কিনে নেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  

সে কারণে ৯ আগস্টকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক ওই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সালে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
 
সেমিনারের আগে সকাল নয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

এ বছর দিবসের মূল স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘জ্বালানি সাশ্রয়, আমাদের অঙ্গীকার’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৪/আপডেটেড: ১৫১৪ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।