ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

এতো তেল যায় কোথায়!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
এতো তেল যায় কোথায়!

ঢাকা: জুট মিলে ব্যবহৃত জেবিও (জুট ব্যাচিং ওয়েল) মেশানো হচ্ছে সয়াবিন তেলের সঙ্গে। তা না হলে ‘এতো তেল যায় কোথায়’ মর্মে প্রশ্ন তুলেছে খোদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন(বিপিসি)।


 
বিপিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জেবিও’র রং দৃশ্যত সয়াবিন তেলের মতো। তবে দাম সয়াবিন তেলের অর্ধেকের সমান। তাই এটি সয়াবিন তেলে মেশানো হচ্ছে। বিষয়টি প্রকাশ হলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।
 
রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি বিপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেবিও সয়াবিন তেলের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরমালিন নিয়ে মানুষ যখন চরম আতঙ্কে রয়েছে ঠিক সেই সময়ে সয়াবিন তেলে ক্ষতিকারক মেশিন ওয়েল ব্যবহার হচ্ছে—এমন খবর জানাজানি হলে জনমনে নেতিবাচক প্রভাবেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।
 
বিপিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে যে সংখ্যক জুটমিল চালু রয়েছে সে তুলনায় জেবিও বিক্রির অনুপাত অনেক বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৯ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন জেবিও বিক্রি হয়। আর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন।
 
এই বাড়ন্ত চাহিদার কারণেই শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিপিসি। তারা বলেছে, পাটশিল্পের কাঙ্ক্ষিত প্রসার হয় নি। তাহলে জেবিও যাচ্ছে কোথায়? জেবিও-মেশানো সয়াবিন তেল খেলে মানুষ চর্মরোগ, দুরারোগ্য ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
 
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, জেবিও শুধু জুটমিলে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। অন্য কোনো কাজে এটি ব্যবহৃত হয় না। জুটমিলে লুব্রিক্যান্ট হিসেবে এবং পাট নরম করার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। প্রতি লিটার জেবিও বিক্রি করা হচ্ছে ৬৭.৭০ টাকা দরে। বেসরকারি কোনো কোম্পানি জেবিও উ‍ৎপাদন করে না। শুধু ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ক্রড অয়েল (অপরিশোধিত তেল) থেকে জেবিও উ‍ৎপাদন করে থাকে।
 
বিপিসি প্রস্তাব করেছে, জেবিও’র দাম যদি সয়াবিন তেলের সমান করা হয় তাহলে এই ভেজাল মিশ্রণ রোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে জেবিও দাম বৃদ্ধি করে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের সমান অর্থা ১১০ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে।
 
কিন্তু এতে বাধ সাধে বিজেএমসি। তাদের দাবি, করপোরেশনের আওতাধীন মিলগুলোতে প্রতিমাসে ১ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন জেবিও প্রয়োজন পড়ে। বর্ধিত মূল্য কার্যকর হলে প্রতিমাসে ব্যয় বেড়ে যাবে ৫ কোটি ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এতে লোকসান আরও বেড়ে যাবে। তখন জুট মিলগুলোর টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। এরপর বিজেএমসির আপত্তির মুখে বর্ধিত মূল্যের গেজেট স্থগিত করা হয়।
 
সয়াবিন তেলে জেবিও মেশানো প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এএম বদরুদ্দোজা বাংলানিউজকে জানান,  ‘সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই আমাদের হাতে। তবে নানাভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে কারণে পরিচালক অপারেশনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। ’
 
তিনি বলেন, খুলনার জেলা প্রশাসকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এই ভেজাল রোধের জন্য। জেলা প্রশাসনও কাজ শুরু করেছে।
 
বিজেএমসি’র (বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন) সাথেও আলোচনা হয়েছে। এখন থেকে জুটমিলের পক্ষ থেকে যে চাহিদাপত্র আসবে সে মোতাবেকই সরবরাহ করা হবে। যাতে কোনোভাবেই বাজারে পাচার হতে না পারে। মন্তব্য করেন বিপিসি চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।