ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বাঙ্গুরার গ্যাস নিতে পেট্রোবাংলা আগ্রহী নয় কেন!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
বাঙ্গুরার গ্যাস নিতে পেট্রোবাংলা আগ্রহী নয় কেন!

ঢাকা: শ্রীকাইল-বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্র বিতর্ক সমাধানে টাল্লো নিজেই দু’দফা চিঠি দিয়েছিলো। টাল্লো বলেছিলো, যদি শ্রীকাইলের গ্যাস স্তরের সঙ্গে মিল থাকে তবে তারা সমঝোতা করতে আগ্রহী।

কিন্তু টাল্লোর সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাপেক্স-পেট্রোবাংলা কেউই।
 
টাল্লো পরে বহুজাতিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জির কাছে স্বত্ব বিক্রি করে বাংলাদেশ ছেড়েছে। এখন ক্রিস নির্বিঘ্নে গ্যাস তুলে যাচ্ছে। আর সেই গ্যাস প্রতি হাজার ঘনফুট ৩ ডলার দিয়ে কিনছে বাংলাদেশ। বাপেক্সকে দিয়ে যদি এই গ্যাস উত্তোলন করা হতো তাহলে এক হাজার ঘনফুটের দাম পড়ত মাত্র ২৫ টাকা।
 
অথচ বাংলাদেশ সে পথে যাচ্ছে না। নিজের গ্যাস বিদেশি কোম্পানিকে তুলে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আর সেই গ্যাস চড়া দামে কিনছে। পেট্রোবাংলার কেন এই আচরণ তা নিয়ে জনমনে অনেক সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কথিত রয়েছে, রাষ্ট্রের লোকসান হলেও সংশ্লিষ্টরা তাদের নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে রাষ্ট্রের লোকসান নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
 
পেট্রোবাংলার একজন সাবেক পরিচালক  জানিয়েছেন, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গুরা ও শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র দুটির দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। গ্যাসক্ষেত্রটি মাটির ৩২শ’ মিটার নিচে অভিন্ন ভূকাঠামোতে প্রায় ১৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত।
 
বাঙ্গুরা অংশ থেকে আইরিশ কোম্পানি টাল্লো ও কানাডীয় কোম্পানি নাইকো যৌথভাবে ২০০৬ সাল থেকে ৪টি কূপের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। পরে গ্যাসক্ষেত্রটি ক্রিস এনার্জির কাছে বিক্রি করে দেয় টাল্লো।
 
অন্যদিকে শ্রীকাইলে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ২০১১ সালে একটি এবং ২০১৩ সালে আরেকটি কূপ খনন করে। এ দুটি কূপ থেকে দৈনিক ৪১-৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জি প্রায় তিনগুণ (১২০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন করছে।
 
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, টাল্লো তার প্রস্তাবে ত্রি-মাত্রিক জরিপে আগ্রহের কথা জানিয়েছিলো। এমনকি এতে ব্যয়ও তারা বহন করতে চেয়েছিলো। তারা বলেছিলো, সার্ভে করে যদি প্রমাণ হয় তাহলে ইউনিটাইজেশন হতে পারে।
 
কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই চিঠির বিষয়ে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। ত্রি-মার্ত্রিক জরিপ ছাড়াও আরও অনেক অপশন ছিলো সেগুলোর বিষয়েও উদ্যোগী হয়নি।
 
বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এই বিতর্কের অবসান হওয়া প্রয়োজন। ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
 
তিনি বলেন, ত্রি-মাত্রিক জরিপ ছাড়াও আরও বিকল্প আছে প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের জন্য। তা হচ্ছে, শ্রীকাইলের কূপ বন্ধ রেখে বাঙ্গুরার গ্যাস চাপ পরীক্ষা করা। একইভাবে বাঙ্গুরা থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করে শ্রীকাইলে যদি চাপ বৃদ্ধি পায় তাহলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে।
 
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, টাল্লো বলেছিলো- যদি একই স্ট্রাকচারে হয়, আমরা হিস্যা দিতে রাজি আছি। তাহলে এতোদিন তারা যে গ্যাস উত্তোলন করেছে সেই গ্যাসের টাকা আদায় করার সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিকভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
 
কিন্তু টাল্লোর এই প্রস্তাব নিয়ে এখনও কোনই ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না পেট্রোবাংলা কিংবা বাপেক্সের। অনেকবার ফোন দিয়েও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ’র সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি তার অফিসে গেলেও কথা বলতে রাজি হননি।
 
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক বাংলানিউজ জানিয়েছেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তার আগে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
 
একই কথা বলেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি এমন ঘটনা থাকে তাহলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এসআই/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।