ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জ্বালানি খাতে সক্ষমতা ব্যয় কমাবে ৭ বিলিয়ন ডলার

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
জ্বালানি খাতে সক্ষমতা ব্যয় কমাবে ৭ বিলিয়ন ডলার ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জ্বালানি খাতে দক্ষতা এবং সক্ষমতা নিশ্চিত করে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফি।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাস ইউনিভার্সিটির প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত খন্দকার সালেক বলেন, বর্তমানে বিদ্যুত ও গ্যাস খাতে যে অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে তার মাত্র ৩২ শতাংশই কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।

এ খাতে সক্ষমতা নিশ্চিত করে শতভাগ অর্জনের ওপর সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর তার মধ্য দিয়ে দেশ অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার খরচের হাত থেকে বাঁচবে।

উদারহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দেশের ছয়টি খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নিশ্চিত করতে পালে দুই হাজার ৬শ’ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় করা সম্ভব হত। এই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে একটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনেই ব্যয় হয় ৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এছাড়া তার রক্ষণাবেক্ষণে খরচ আরো প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। তাই কেবল সক্ষমতাই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় সম্ভব।  

শুক্রবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাংলানিউজের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

জ্বালানি বিষয়ক পাক্ষিক ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ায়’ এর নির্বাহী সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন, জ্বালানি বিষয়ক বিটের সাংবাদিক দৈনিক সমকালের রফিকুল বাশার, ডেইলি সান’র শামীম আহমেদ, একাত্তর টিভির মোজাহেরুল হক রুমেন, সময় টিভির দেবাশীষ রায়, বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর (ইংরেজি) এসএম সালাউদ্দিন আহমেদ, চিফ অব করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, আউটপুট এডিটর (বিজনেস) নুরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর রাইসুল ইসলাম প্রমুখ সেমিনারে অংশ নেন।

টেকনোলজি ও টেকনোলজিস্টের অভাব জ্বালানি খাতে
খন্দকার এ সালেক বলেন, জ্বালানি সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে টেকনোলজি ও টেকনোলেজিস্টের অভাব। এদেশে এখনো কোনো মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার নেই, নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে মাইনিং নিয়ে কোনো বিভাগ নেই।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে জ্বালানি উৎপাদনে যেমন যাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি যা উৎপাদান করা হচ্ছে তাতেও ব্যয় বাড়ছে। তাই বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (বাপেক্স) ড্রিগিং ম্যানেজার হওয়ার উচিত। আর এর জন্যও বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা দরকার।

তিনি বলেন, এদেশে কি পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে ও তা কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা নেই। তাই উদ্যোগগুলোও আলোর মুখ দেখে না। বর্জ্য ও বাতাস থেকে খুব সাশ্রয়ে বিদুৎ উৎপাদন করা যায়। কিন্তু নিয়ে যথার্থ কোনো উদ্যোগ নেই।

মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, কেরানি ও কারিগর একসঙ্গে কাজ না করলে সফলতা আসে না। অর্থাৎ, সরকারি কর্মকর্তা ও গবেষকদের সম্মিলিত প্রয়াসে জ্বালানি নিয়ে কাজ করা দরকার। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ বা গবেষক নেই। যারা আছেন তাদের সরকার কাজে লাগায় না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন!
খন্দকার সালেক মনে করেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ভিশন বাংলাদেশের রয়েছে, সেটা ধীরে ধীরে স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। কারণ আমাদের ধীরে ধীরে সময় কমে আসছে। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিকভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশীয় কয়লা উত্তোলনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে পাবলিক খাত থেকে আসে ৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, বেসরকারি ৪ হাজার ৫৬৫ মেগাওয়াট এবং আমদানি নির্ভর ৫০০ মেগাওয়াট। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই। আমাদের হাতে সময় খুবই কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভিশন এখন ধীরে ধীরে স্বপ্ন হতে যাচ্ছে!

কনোকো ফিলিপস অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসে
আমি আগেই বলেছিলাম, কনোকো ফিলিপস কাজ করতে আসেনি। তারা এসেছিলো তাদের শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে। ঠিক তাই হয়েছে। তারা সময়ক্ষেপণ করে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ ছেড়েছে বলে মন্তব্য করেন মেলবোর্নের মোনাস ইউনিভার্সিটির প্রজেক্ট অফিসার সালেক সুফি।

তিনি বলেন, কনোকো ফিলিপস সাগরে (১০ ও ১১ নম্বর) ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুতের সম্ভাবনার কথা বলেছে, তা সঠিক নয়। সর্বোচ্চ ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস থাকতে পারে।

বাংলাদেশের মডেল পিএসসি সমালোচনা করে সালেক সুফি বলেন, আমাদের মডেল পিএসসি অনুসরণে আফগানিস্তানে ১২ চুক্তি করা হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন আগ্রহী খুঁজে পাচ্ছে না। এখনই ভেবে দেখা দরকার।

তিনি আরও বলেন, পিএসসি গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। না হলে বিদেশি কোম্পানি আসবে না।

শহরের বর্জ্য থেকেই আসবে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত
বাংলাদেশে যে পরিমাণ সলিড বর্জ্য হয়, তা দিয়ে প্রতিটি বড় শহরে অন্তত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কেবল ঢাকা শহরের বর্জ্য দিয়েই ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে বলে জানান জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফি।

তিনি বলেন, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করে শহরের চাহিদা মেটানো যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বর্জ্য ব্যবহার করে শহরের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর উদাহরণ আছে। সে উদাহরণকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেরও একই প্রযুক্তি কাজে লাগানো উচিত। এতে করে একদিকে শহর পরিষ্কার হবে, অন্যদিকে গ্রিন টেকনোলজির মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।

‘বড়পুকুরিয়া থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতেই কয়লা উত্তোলন সম্ভব’
সালেক সুফি মনে করেন, দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ার খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং জ্বালানি চাহিদার মেটানোর পাশপাশি এতে এলাকার উন্নয়নও ঘটবে।

তিনি বলেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিরোধিতা আছে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম খরচে বেশি কয়লা উত্তোলন সম্ভব। আর যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটিও অমূলক।

‘এশিয়া এনার্জি হঠাও’ আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করে এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, তাদের হঠাতে গেলে সরকারকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কারণ চুক্তি বাতিল না করে তাদের কাজে বাধা দিলে আইনি মামলায় বিলিয়িন বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
জেপি/কেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।